ঢাকা: দুই দফা পিছিয়ে যাওয়ায় সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে অপশন কেবল একটি। তা হচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অবস্থায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোট করা ছাড়া কোনো অপশন নেই। কেননা, আগস্ট মাসে বড় দল আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকে। তাই এ মাসে ভোট করার পক্ষে নয় কমিশন। এক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভোট করতে হবে। কারণ সংবিধানে দেওয়া সব সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বর।
সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গত ১১ মার্চ মৃত্যুবরণ করলে ১৫ মার্চ আসন শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। শূন্য আসনে সংবিধান অনুযায়ী ভোট করতে হয়, আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। এছাড়া দ্বৈব-দুর্বিপাক থাকলে আরো ৯০ দিন সময় নিতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। করোনার কারণে সেই ৯০ দিন সময়ও নেন সিইসি।
সব মিলিয়ে ১৮০ দিন সময় পায় ইসি। আসন শূন্যের তারিখ থেকে ১৮০ দিন পূর্ণ হয় ৬ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ আগস্টে ভোট না করলে ইসি হাতে সময় কেবল সেপ্টেম্বরের প্রথম ছয় দিন।
এ বিষয়ে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, আগস্টে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। এছাড়া শোকের মাস পালন করে একটি বড় দল। অন্যান্য দল এবং ভোটাররাও এই কর্মসূচি পালন করে থাকে। তাই আগস্টে ভোটের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। এর পরেই ভোট করতে হবে।
গত ১৪ জুলাই নির্বাচনটি সম্পন্ন করার জন্য ভোটের তারিখ ছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের মৃত্যুদিবস হওয়ায় ওই দিন ভোটগ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানায় দলটি। একই সঙ্গে তারা ভোট পেছানোর আবেদন করলে, কমিশন যৌক্তিকতা মেনে ২৮ জুলাই নির্বাচনের নতুন তারিখ দেয়।
কিন্তু করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চলমান কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে ভোট না করার আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। ফলে উচ্চ আদালত শুনানি করে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভোটের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
কঠোর বিধি-নিষেধ ৫ আগস্ট পর্যন্ত জারি করেছে সরকার। পরবর্তীতে বিধি-নিষেধ বাড়লেও সংবিধানে ভোট পেছানোর জন্য ৬ সেপ্টেম্বরের পর আর সময় নেই বলেও মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, সংবিধানে ১৮০ দিনের বাইরে সময় নেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। অতীতে এমন কোনো নজীরও নেই। এক্ষেত্রে আদালত থেকে নতুন কোনো ব্যাখ্যা না আসলে ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ভোট করতে হবে।
সিলেট-৩ আসটি ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা নিয়ে গঠিত। এতে ৩ লাখ ৫০ হাজারের মতো ভোটার রয়েছে।
ভোটগ্রহণের জন্য প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছিল ইসি। ২৬ জুলাই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটারদের ভোটদান শেখাতে মক ভোটিংও আয়োজন করা হয়েছিল। এ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৪৯টি। প্রতিটিতেই ঢাকা থেকে লোকবল পাঠিয়ে মক ভোটিংয়ের আয়োজন করেছিল ইসি।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী।
নির্বাচনে প্রথম রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেনকে। ভোটের দায়িত্বপালনরত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে গত ২৫ জুলাই চিকিৎসাধীন মারা যান তিনি। এখন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক।
এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি নবম ও দশম জাতীয় সংসদেও এ আসন থেকে নির্বাচিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
ইইউডি/এএটি