ঢাকা: করোনা টিকা নেওয়ার বয়সসীমা কমানোয় চাপ বেড়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রমে। ফলে রাতেও কাজ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় শুরু থেকেই এনআইডি সেবা অব্যাহত রয়েছে। তবে বর্তমানে জরুরি সেবায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রতিদিন অফিস খোলা রেখেই এনআইডি কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।
সরকার বয়সসীমা কমানোয় এই চাপ আরও বেড়েছে। কারণ ২০২১ সালে নতুন ভোটার হিসেবে তালিকায় যোগ হয়েছেন ১৯ লাখ ২০ হাজারের মতো নাগরিক। আর ২০২০ সালে যোগ হয়েছেন ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার নাগরিক। গত দুই বছরে ৭৫ লাখ নাগরিক নতুন ভোটার হিসেবে তালিকায় যোগ হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ১৮ বছর বয়সীদের টিকা কার্যক্রমে আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়ার পর তারা যোগাযোগ করছেন এনআইডির জন্য। এছাড়া নতুন ভোটার হতে আসছেন অনেকে। কারো কারো রয়েছে সংশোধন জনিত জটিলতা।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী এক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ আসেন এনআইডি সংক্রান্ত কাজে। প্রতিদিন ফটো তোলা ও আঙুলের ছাপ নেওয়া যায় না। এজন্য তাই সপ্তাহে তিনদিন রাত নয়টা-দশটা পর্যন্তও কাজ করতে হয়। কেননা, লকডাউনের কারণে টেকনিক্যাল লোকবল প্রতিদিন আসতে পারে না।
ঢাকা উত্তর সিটির এক থানা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, প্রতি মঙ্গলবার নাগরিকদের স্বশরীরে সেবা দেওয়া হয় ঢাকা মহানগরে। কেননা, করোনার প্রকোপ রাজধানীতে বেশি। ফলে সারাদিন উপচে পড়া ভিড় থাকে। তারপর পুরো সপ্তাহ ধরে করতে হয় অফিসিয়াস কাজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে এনআইডি দিয়ে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করেছেন প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ নাগরিক। দিনদিন এই হার বাড়ছে।
তবে এই কাজ নিয়ে বা কাজের চাপ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অসুবিধা না থাকলেও আছে ঝুঁকি। তারা বলছেন, ইতিমধ্যে ১৯২ জনের মতো ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আটজন। একজন আঞ্চলিক, একজন অতিরিক্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ প্রায় সবাই মাঠের লোকবল। এই অবস্থায় তাদের সুরক্ষায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
কর্মকর্তারা বলছেন, দেড় বছরে একটি মাস্ক কেনার টাকাও বরাদ্দ দেয়নি ইসি। সেবাগ্রহীতাদের জন্য হেন্ড সেনিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা তো দূরের কথা।
একজন কর্মকর্তা বলেন, নিজে বাঁচতে বেতনের টাকা থেকেই বাইরে বেসিন বসিয়েছি। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। সেনিটাইজারের ব্যবস্থাও ব্যক্তিগত খরচে শুরুর দিকে করেছিলাম।
জানা গেছে, কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার এ নিয়ে তাগাদা দিলেও কমিশন থেকে অন্যখাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী কিনতে বলেছেন। যেখানে অন্যান্য খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ বাড়তি থাকে না।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন থানা নির্বাচন কর্মকর্তারা জোর দাবি তুললে কিছু অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে সেটাও খুব কম। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি থানা বা উপজেলার জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দের চিন্তা ভাবনা চলছে।
এ বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিগগিরই তারা পেয়ে যাবেন।
আক্রান্ত হলে সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তারা নিজেরাই কিনে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন মাঠ পর্যায়ে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর/টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ও অফিস সহায়ক/সহকারীর মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ