ঢাকা: ফের উল্টো পথে হাঁটছে বিএনপি। স্থানীয় সকল নির্বাচনই কেবল নয়, জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না।
ইসির দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ, নয় পৌরসভা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ ও কুমিল্লা-৭ আসনের উপ-নির্বাচনসহ বেশ কিছু উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসবের কোনোটিতেই অংশ নেবে না দলটি।
এই অবস্থায় বিএনপি মহাসচিব বা দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন নিয়ে কোনো ঘোষণা না এলেও এমন ইঙ্গিত দিলেন এক নেতা।
সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালে প্রিন্স বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে এসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন ইঙ্গিত দেন।
আপনারা এখন উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছেন না, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের দল কি ভাববে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নির্বাচন যে, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না, জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটবে না। বিগত দুইটা নির্বাচন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে এটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। সেই কারণে বর্তমান সরকারের অধীনে বা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সেই সরকারকে যেই নামেই ডাকা হোক না কেনো। আমরা দল নিরপেক্ষ সরকার চাই। দল নিরপেক্ষ এবং সরকারের প্রভাব মুক্ত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন চাই। ’
দলীয় সরকারের অধীনেই যদি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা হয় সেই নির্বাচনে বিএনপি কি যাবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা তো আমরা আগেই বলেছি। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ’
বিএনপির এই নেতা নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা সেই ব্যাপারে নিশ্চয়ই চিন্তা-ভাবনা করছি। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশে যারা নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে, গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তা করে, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে চিন্তা করে, এই রকম রাজনৈতিক দল বা সুশীল সমাজ কিংবা বিভিন্ন সংগঠন তারাও দেশে-বিদেশে সকল পর্যায়ে কিন্তু আগামী নির্বাচন কমিশন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। সময় আসলেই আপনারা সেটা জানতে পারবেন। তবে আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই, যেই নির্বাচন কমিশন মাজা খাড়া করে দাঁড়াতে পারবে। দক্ষ, যোগ্য, যারা সরকারের আঙুল হেলেনে চলবে না। যারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং যারা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। আমরা সেই রকম একটি নির্বাচন কমিশন চাই। ’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি করার সুযোগ সুবিধা আস্তে আস্তে সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে জনগণের যে অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দলের যে অংশগ্রহণ, সেগুলো আস্তে আস্তে অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। সেই ব্যাপারে কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা দেখভাল করছে না। এটা অত্যন্ত দু:খজনক ব্যাপার। ’
এমরাহ সালেহ বলেন, গত ১২ বছরে আমাদের যে অভিজ্ঞতা কিংবা ২০১৪ সালের নির্বাচন, তারপর উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচন বা তার পরবর্তীতে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো হয়েছে। সেখানে আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতার বলে এই নির্বাচন কমিশন আসলে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
বিএনপি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভোট বর্জনের রাজনীতি শুরু করে। এরপর তারা ২০১৫ সালের ঢাকার দুই সিটিসহ চট্টগ্রাম সিটির ভোটে অংশ নিলেও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। এরপর আর কোনো ভোটে অংশ নেয়নি।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে আসন পায় ছয়টি। এরপর কিছু নির্বাচনে অংশ নিলেও ২০২১ সালে এসে ফের নির্বাচন বর্জনের নীতি গ্রহণ করেছে দলটি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন।
২০২৩ সালের শেষ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২১
ইইউডি/জেআইএম