ঢাকা: চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংস ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে কোনো নির্বাচনী অপরাধ সংগঠিত হলেই দায়ীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে।
ইসির সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এরপর তা সব মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে জারি করা হয়।
ইসির জনবল ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমানের জারি করা ওই নির্দেশনা বলা হয়েছে, নির্বাচনের পূর্বদিন অথবা নির্বাচনের দিন কোনো অপরাধের জন্য কাউকে আটক করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দিতে হবে। একইসঙ্গে তা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
এদিকে মাঠ মাঠ প্রশাসনও ভোটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে ইসিকে কঠোর হওয়ার সুপারিশ করেছে। রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনাও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের কারণে প্রার্থিতা বাতিলের উদ্যোগ নিতেও বলেছে।
ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাও প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনী অপরাধ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এছাড়া ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রার্থিতা বাতিল করার।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতায় ইতোমধ্যে অন্তত পাঁচজনর নিহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া নির্বাচনর পরবর্তী সহিংসতায় গুরুত আহত করা হয়েছে অন্তত এক ডজন ব্যক্তিকে। ইতোমধ্যে ৩৬৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১১ নভেম্বর ৮৪৬টি ইউপিতে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোট হবে ১ হাজার ৩টি ইউপিতে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংখ্যা দলগুলোর প্রার্থীর সংখ্যার চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে সরকার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় অনেকেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ইউপি:
এসব ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৪ হাজার ৭৫ জন। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বি রয়েছেন ৩ হাজার ৩১০ জন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীই রয়েছে ২ হাজার ৫৫৪জন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৮১ জন। দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ১৭টি দল অংশ প্রার্থী দিয়েছে। দলগুলোর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি তথা ব্যাপক হারে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৯ হাজার ৪৯৮ জন। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ৯ হাজার ১৬১ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৭৬ জন।
এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৩০ হাজার ৮৮৩জন প্রার্থী। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে রয়েছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২০৩ জন প্রার্থী।
তৃতীয় ধাপে ১০০৩ ইউপি:
১ হাজার ৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট মনোনয়ন দাখিল করেছেন ৫ হাজার ২৮৫ জন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩ হাজার ৩৩৮ জন। অবশিষ্ট ১ হাজার ৯৪৭ জন প্রার্থী ২০ টি দল থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অর্থাৎ তৃতীয় ধাপেও বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ হাজার ৪৬৯ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭ হাজার ৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ সময় ১১ নভেম্বর ও ভোটগ্রহণ ২৮ হবে নভেম্বর।
গত ২০ জুন প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন এবং ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৬০ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রথম ধাপে ৭৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২১
ইইউডি/এএটি