ঢাকা: দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন উপলক্ষে ৬৭০ জন ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম) মাঠে নামিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী অপরাধ করলে মামলা হবে।
ইসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশন নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামিয়েছে। তারা নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখভাল করবেন।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্মসচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান জানিয়েছেন, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ইউপিতে। এজন্য মাঠে নামানো হয়েছে ৩৩৯ জন নির্বাহী হাকিম। আর বিচারিক হাকিম রয়েছেন ৩৩১ জন। তারা মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) থেকে আগামী শনিবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ব্যবস্থা নেবেন তারা। তবে নির্বাহী হাকিমরা থাকবেন শুক্রবার পর্যন্ত।
নির্বাহী হাকিম
মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর আওতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং ওই আইনের তফসিলে বর্ণিত মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুযায়ী আগের মতো ১১৩টি উপজেলার প্রতিটির জন্য ৩ জন করে মোট ৩৩৯ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে।
বিচারিক হাকিম
ইসির আইন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোছা. শাহীনুর আক্তার জানিয়েছেন, বিচারিক হাকিমরা ভোটের আগে-পরে মোট পাঁচদিন অর্থাৎ ৯ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
উপজেলা ভেদে কোথাও তিন আবার কোথাও দুই ইউপির জন্য একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের ফৌজদারি অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনা করবেন তারা।
শাহীনুর আক্তার জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালার অধীন নির্বাচনী অপরাধসমূহ ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ (অ্যাক্ট নম্বর পাঁচ)’ এর ১৯০ ধারার অধীনে আমলে নেওয়া ও তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচারের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন বিচারিক হাকিমরা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব). শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বিভাগীয় কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে কঠোর হতে বলেছেন। এমনকি প্রার্থিতা বাতিল করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাও প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কারো জন্য নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা আমাদের আছে।
আগামী ১১ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।
ইসির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ১১৫টি উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬টি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এসব ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৪ হাজার ৭৫ জন। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ৩ হাজার ৩১০ জন।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৯ হাজার ৪৯৮ জন। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ৯ হাজার ১৬১ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৭৬ জন।
এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৩০ হাজার ৮৮৩ জন প্রার্থী। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে রয়েছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২০৩ জন প্রার্থী।
গত ২০ জুন প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন এবং ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৬০ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপে ৭৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ১৭টি দল প্রার্থী দিয়েছে। দলগুলো হলো—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, কংগ্রেস, জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাসদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি।
ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপিতে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে ইসি। ২৮ নভেম্বর ১ হাজার ৩ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ