সিলেট: দ্বিতীয় ধাপে সিলেট জেলার ৩ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৯টিতেই নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। নৌকার প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে বিএনপি-জামাত ও দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া দিনভর শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ শেষে গণনার পর রাতেই ফলাফল ঘোষণা দেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ঘোষিত ফলাফলে ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হলেও ৯টিতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। ২টিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, ৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে বিএনপি, একটিতে জামায়াত ও ১টিতে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট রিটারিং কর্মকর্তাগণ বেসরকারিভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
প্রাপ্ত ফলাফলে সিলেট সদরের ৪টি ইউনিয়নের ২টিতে নৌকা, একটিতে জামায়ত এবং অপরটিতে খেলাফত মজলিস প্রার্থী জয়লাভ করেন। কোম্পানীগঞ্জে ৫টির মধ্যে ৩টিতে আ.লীগ, ২টিতে বিএনপি এবং বালাগঞ্জে ৩টিতে বিএনপি, ১টিতে নৌকার প্রার্থী, অপরটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয় লাভ করেন।
সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে মোগলগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হিরণ মিয়া নির্বাচিত হয়েছেন।
কান্দিগাঁওয়ে জামায়াত নেতা আবদুল মনাফ চশমা প্রতীকে ১০ হাজার ৬৩২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে ৯ হাজার ৯৭২ ভোট পেয়েছেন।
জালালাবাদ ইউপিতে ৮ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের ওবায়দুল্লাহ ইসহাক নৌকা প্রতীকে ২ হাজার ২৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিক মিয়া টেলিফোন প্রতীকে পেয়েছেন ২হাজার ৬৫ ভোট।
হাটখোলা ইউপিতে খেলাফত মজলিস নেতা রফিকুজ্জামান দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে ৪ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলওয়ার হোসেন অটোরিকশা প্রতীকে ৩ হাজার ৩২৬ ভোট পেয়েছেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২হাজার ৭৮১ ভোট পেয়েছেন আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। আর ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ১ হাজার ৯৮৫ ভোট পেয়ে চার নম্বরে রয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৫টির মধ্যে ইসলামপূর পূর্ব ইউনিয়নে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র আলমগীর হোসেন আলম আনারস প্রতীকে ৫ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অটোরিকশা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক ৩হাজার ৭ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থী ২হাজার ৬১ ভোট পেয়ে ভোটের হিসাবে ৫ নম্বরে রয়েছেন।
তেলিখালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ আলফু আনারস প্রতীকে ৬ হাজার ৩৭৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মিয়া ৩ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়েছেন।
উত্তর রণিখাইয়ে আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৪৭৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন ২হাজার ৭৬৭ ভোট পেয়েছেন।
দক্ষিণ রণিখাইয় ইউপিতে আওয়ামী লীগের ইকবাল হোসেন ইমাদ নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ৭২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী টেলিফোন প্রতীকে শামস উদ্দিন শাহীন ২৫৯৫ ভোট পেয়েছেন।
ইছাকলস ইউপিতে বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদুর রহমান অটোরিকশা প্রতীকে ৩ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত এখলাসুর রহমান নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ১১৫ ভোট পেয়েছেন।
বালাগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মুনিম আনারস প্রতীকে ৭ হাজার ৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. জুনায়েদ মিয়া নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৫৫৮ ভোট পেয়েছেন।
পূর্ব গৌরীপুরে বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৪২২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত হিমাংশু রঞ্জন দাস ১ হাজার ৫০৪ ভোট পেয়েছেন।
পশ্চিম গৌরিপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহমান আনারস প্রতীকে ২ হাজার ৯৯১ ভোট পেয়ে নৌকাকে ধরাশায়ী করলেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত আমিরুল ইসলাম মধু নৌকা প্রতীকে ২ হাজার ৭৭৯ ভোট পেয়েছেন।
বোয়ালজোড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আনহার মিয়া নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৯৬০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি মানিক মিয়া ২ হাজার ৫৪৪ ভোট পেয়েছেন।
দেওয়ানবাজারে বিএনপির নাজমুল আলম ঘোড়া প্রতীকে ৮ হাজার ৪৩৫ ভোট পেয়ে নৌকাকে ধরাশায়ী করেছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ছহুল আব্দুল মুনিম ৬ হাজার ৪০৬ ভোট পেয়েছেন।
পূর্ব পৈলনপুরে আওয়ামী লীগের শিহাব উদ্দিন নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আব্দুল মতিন ঘোড়া প্রতীকে ২হাজার ৬০৯ ভোট পেয়েছেন।
এদিন বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের সাড়া জাগানো উপস্থিতি ছিল। ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন।
দ্বিতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের নির্বাচন অনুষ্ঠিত ৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে সিলেট সদর উপজেলার ৪টি, বালাগঞ্জের ৬টি, কোম্পানীগঞ্জের ৫টি, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১০টি, দোয়ারাবাজারের ৯টি, হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জের ৫টি এবং মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২১
এনইউ/এমএইচএম