নীলফামারী: নীলফামারী সদরের বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) চড়াইখেলা ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক সাড়ে তিন ঘণ্টা অবেরোধ করেন পরাজিত পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ভোটার ও সমার্থকরা।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই সড়কের দারোয়ানী বাজারে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
জেলার প্রধান ওই সড়ক সাড়ে ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকায় দূরপাল্লাসহ সব যান চলাচল অচল হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। ওই অবরোধ কর্মসূচিতে এলাকাবাসীর সঙ্গে অংশ নেন ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন প্রামানিক (আনারস), আসাদুল হক শাহ (চশমা), আব্দুর রহমান (ঘোড়া), জাকির হোসেন মোল্লা (ইজিবাইক) ও মকসেদুর রহমান (হাতপাখা)।
তাদের অভিযোগ, ১৩ নম্বর চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাত নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের ব্যাপক কারচুপি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এমন ডাকাতির প্রমাণে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার সময় ব্যালট পেপারের একটি বস্তা ফেলে যান। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক সেটির প্রতিবাদ জানালে রাতে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত হয়। এরপর ভোর রাতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম রেজাকে (মোটরসাইকেল) বিজয়ী ঘোষণা করেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আসাদুল হক শাহ (চশমা) অভিযোগ করে বলেন, মাসুম রেজা পুলিশের একজন ডিআইজির নিকট আত্মীয়। নির্বাচনে তার চাচার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন এলাকায়। নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভোটে ব্যাপক কারচুপি করেছেন। সবশেষ ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যালট বস্তাবন্দী করে ফেলে রেখে নিজের সরবরাহ করা ব্যালট বাক্সে ভরেন।
অপর প্রতিদ্বন্দ্বী মুরাদ হোসেন প্রামানিক (আনারস) বলেন, তারা ওই ব্যালট গায়েব করার জন্য বস্তাটি বাথরুমে রেখেছিলেন। ব্যালট বাইরে রেখে কর্মকর্তারা ভোটের হিসাব কীভাবে মেলালেন? এতে প্রমাণ হয় বিজয়ী মাসুম রেজা নকল ব্যালট সরবরাহ করেছিলেন।
তারা বলেন, কারচুপি ও ভোট ডাকাতির ওই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে শুক্রবার (১২ নভেম্বর) জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধন ও দারোয়ানী বাজারে সড়ক অবরোধ করেন। ষড়যন্ত্রের ওই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের আবেদন জানিয়েছি জেলা প্রশাসকের কাছে।
এদিকে, চেয়ারম্যান পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবিতে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বেলতলী বাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইদিনে বেলা ১২টার দিকে ঘণ্টাব্যাপী মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন ওই ইউপি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা শ্যাম চরণ রায়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ফলাফল বাতিল করার সুযোগ নেই। তারা চাইলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন।
ব্যালটের বস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, তাড়াহুড়োর মধ্যে ভুলবশত চড়াইখোলা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডে ব্যালটের একটি বস্তা রেখে এসেছিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। এরপর তিনি গিয়ে ওই বস্তা নিয়ে এসেছেন। এজন্য ফলাফল ঘোষণায় একটু বিলম্ব ঘটে। পরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যে গভীর রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিবেন। আমি তাদেরকে বিষয়গুলো অবহিত করার পর সন্তুষ্টু হয়ে তারা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাহারুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার ও ওসি আব্দুর রউপ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২১
কেএআর