নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকিরকে দেশি অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এসময় তার সঙ্গে থাকা বন্ধু ফয়সাল আহমেদ সুমনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (২১ নভেম্বর) দিনগত রাতে ঢাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বিকেলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য জানান নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান।
গ্রেফতারকৃত রাতুল হাসান জাকির (৩২) বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি গ্রামের হাসান আলীর ছেলে ও ফয়সাল আহমেদ সুমন (৩৫) বটতলিকান্দি এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাতুল হাসান জাকির এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর টেঁটা, বল্লম, ককটেল, দেশী অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করেন। বাঁশগাড়িতে টেঁটাযুদ্ধের মূল হোতা হচ্ছেন রাতুল ও সুমন।
তিনি জানান, গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাঁশগাড়ি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফুল হক সরকারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী রাতুল হাসান জাকির (মোবাইল ফোন প্রতীক)। এ নিয়েই বেশ কয়েকদিন ধরেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর মধ্যে ভোটের আগের দিনগত রাত সাড়ে ৩টায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফুল হক তার সমর্থক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মেম্বার, লতিফ আলী, ডা. হবি, সেলিম মেম্বারের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে বাঁশগাড়ি হিন্দুপাড়া হাসপাতালের কাছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান আলী সারজার ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। তার আগে ওই দিন সন্ধ্যায়ও দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়, টেঁটা, বল্লম গিয়ে হামলা করা ছাড়াও গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থক সালাউদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল হকের সমর্থক দুলাল মিয়া মারা যান। ওই নির্বাচনে রাতুন হাসান জাকির বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
পরে সহিংসতায় নিহত আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকের পরিবার রাতুলসহ অজ্ঞাতনামাদের নামে হত্যা মামলা করে। এরপর আত্মগোপনে ছিরেন রাতুল। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রোববার রাতে ঢাকার আগারগাঁও এলাকা থেকে রাতুল ও তার বন্ধু সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে রাত আড়াইটার দিকে বাঁশগাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দু’টি ওয়ান শ্যুটারগান, চার রাউন্ড কার্তুজ ও রামদা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র নির্বাচনী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করার কথা তারা স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকিরের নামে হত্যা, দাঙ্গা, অস্ত্রসহ ২২টি মামলা ও তার বন্ধু ফয়সাল আহমেদ সুমনের নামে একাধিক হত্যা মামলাসহ নয়টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাদের নামে আরো একটি মামলা করবে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, চরাঞ্চলে যারা দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়িত, তাদের গ্রেফতারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এরই মধ্যে দাঙ্গার মূলহোতাদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। দ্রুতই জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
এসআই