মেহেরপুর: ‘রাজনীতির শেষ হিসাব হচ্ছে নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের ভোটের দিনে যদি আপনাদের কাছে না পাই, আপনি বিবাহ করবেন আমার কাছে, আর শোবেন না, আর আপনি আমার বউ! এসব আর অত সহজ হবে না।
সম্প্রতি এক নির্বাচনী পথসভায় মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান এ বক্তব্য দেন। এদিকে এ বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নির্বাচনী পথসভায় মেহেরপুরে নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘোষণাও দিয়েছেন জেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের দুই নেতা।
তারা হলেন-জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেছুর রহমান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন প্রমুখ।
এতে আরও বলতে দেখা যায়, ‘নৌকার সিল হবে ওপেন এবং টেবিলে। একাধিক সিল মারতে হবে। পুলিশ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা কিছু করতে পারবেন না। ’
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আপনাদের শরীরে আমরা কোনো আঁচড় লাগতে দেব না, যদি আপনারা আমাদের ভাই হিসাবে থাকেন। ২৮ তারিখের নির্বাচনে মেম্বারের ভোটটি যাঁকে খুশি তাকে দেবেন, তবে নৌকার সিলটি দেখায়ে দেবেন। আমাদের সঙ্গে কোনো আপসে কথা হবে না। ’
মেহেরপুরের গাংনীর ষোলটাকা ইউনিয়নের পথসভায় দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাতে সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ইদ্রিস আলীর পক্ষের নির্বাচনী সভায় তারা এ ঘোষণা দেন। এ দুই নেতার বক্তব্যে গোটা জেলায় চলছে সমালোচনা।
তারা বলেছেন, এ গ্রাম (কুলবাড়িয়া গ্রাম) পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত। এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে একত্রিত হয়ে নৌকার পক্ষে ওপেন সিল মারতে হবে। আর মেম্বারের ব্যালটে সিল মারতে হবে গোপনে। আমাদের সঙ্গে মন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী রয়েছেন। আপনাদের শরীরের কোনো জায়গায় আঁচড় লাগতে দেব না। যে কোনো মূল্যে নৌকার প্রার্থীকে জেতাতেই হবে।
এ বিষয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম হোসেন বলেন, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। যা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের কথা আমরা শুনেছি। তবে এখনও কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগমী ২৮ নভেম্বর কুতুবপুর ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের এ ধরনের উস্কানিমুলক বক্তব্য সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছে।
তবে জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান ও পুলিশ সুপার রাফিউল আলম নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ভোট কেন্দ্রে কেউ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
এনএইচআর