বরিশাল: বরিশালের রহমতপুরে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মারধরের কথা বলে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের এক প্রার্থী। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ওই প্রার্থীর দেওয়া সেই বক্তব্যের ভিডিও।
আর এ নিয়ে গোটা এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়। বিরোধীশিবিরের সেই ভিডিওকে পুঁজি করে নির্বাচনী মাঠ গরম করছে বলে অভিযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রাজগুরু গ্রামে উঠান বৈঠকে বক্তব্যে দীর্ঘ সময় কথা বলেন তিনি। তার বক্তব্য ‘বাবুগঞ্জ দর্পণ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে লাইভ করা হয়। বক্তব্য বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওসিকে মারধরের কথা প্রচার করছেন। একইসঙ্গে এলাকার বিভিন্ন লোককে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলছেন। এগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের আচরণ-বিধি লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর উঠান বৈঠকের ৪১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর ১০ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের সময়ে বলতে শোনা যায়, আমি (আক্তারুজ্জামান মিলন) আপনাদের একটি সম্পদ।
এর আগের নির্বাচনে আমার ভোট রাশেদ খান মেনন চুরি করে নিয়ে গেছেন। বাবুগঞ্জের ওসি মাহাবুব তিনি গৌরনদীর জামাই। এই সুফিয়ান ভাই (পাশের এক সমর্থক) সেদিন বলতেছিল আমার ভোট ঘুরানোর জন্য ওসি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি গত নির্বাচনে সরোয়ার মাহমুদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে আমার ভোট কেটেছে। সেন্টারে সেন্টারে গুলি করেছে। এই কথা জানতে পেরে আমি মুজিব কোর্ট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪/৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কিভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)।
সব কনস্টেবল আমার পক্ষে ছিল। তারা বলছেন, স্যার আগেই বলছিলাম মিলন মেয়া কি জিনস, যে থানায় আইয়া গুতাইবে (মারধর)। এহন গুতা খাইছেন? আমি এই মুজিব কোর্ট খুইলা ওসিরে ওই রুমের মধ্যে গুতাইছি।
মিলনের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রহমতপুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন মিয়া বলেন, আমরা তার বক্তব্য শুনেছি।
তিনি ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন যেন ভোটাররা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে না যায়। তিনি শুধু ওসিকে মারধরের বক্তব্য দিয়েছেন এমন নয় জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ারম্যানরা, বহিরাগতদের এনে জড়ো করেছেন। সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতেই তার এসব চেষ্টা।
ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরিশালের অন্যান্য ইউনিয়নে যেভাবে সুষ্ঠ ভোট হয়েছে তেমনি রহমতপুর ইউনিয়নে সুষ্ঠ ভোট উপহার দিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।
অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মু. আক্তার উজ জামান মিলন বলেন, গত নির্বাচনের (২০১৬ সাল) সময় বাবুগঞ্জের তৎকালীন প্রশাসনের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল, সেটার কথা বলে বর্তমান প্রশাসনের লোকজন ভালো বলে ভোটারদের আশ্বস্ত করেছি। সেসঙ্গে ইভিএমে ভোটের ভালো দিকগুলো তুলে ধরেছি। সেগুলো বোঝাতে গিয়ে কিছু কথা বলতে হয়েছে। তবে, যে ভিডিও নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটি নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ফায়দা হাসিলের জন্য সাজিয়ে প্রচারণা করছে।
এদিকে বাবুগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি মাহাবুবুর রহমান বিষয়টি এখনো শোনেননি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫ বছর আগের ঘটনা আর সে বিষয়ে কোনো জিডি ও মামলা থানায় নেই। প্রার্থী কি বক্তব্য দিচ্ছে সেটি ভোটাররাই বিবেচনা করবেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওসিকে মারধর করার বক্তব্য অবশ্যই নির্বাচনী আচরণ-বিধি লঙ্ঘন। প্রচার-প্রচারণায় এমন আচরণ করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, কেউ এখনও এই বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে রহমতপুর ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিয়নে পাঁচজন চেয়ারম্যান ও ৩৩ জন সংরক্ষিত এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১০টি ভোটকেন্দ্রে ২১ হাজার ৫৫৩ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২১
এমএস/এএটি