মেহেরপুর: ‘মেহেরপুর সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রাম পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত। এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে একত্রিত হয়ে নৌকার পক্ষে ওপেন সিল মারতে হবে।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ২৩ নভেম্বর নির্বাচনী জনসভায়। সে ঘোষণা অনুযায়ী এ ভোট কেন্দ্রটি সকাল থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেন একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক। সবাইকে বের করে দিয়ে সেন্টার দখলে নেন তারা। এরপর শুরু করেন প্রকাশ্যে ভোট গ্রহণ। শুধু ভোট মেরেই নেননি তারা টেবিল সিল শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাদের ভোট রক্ষার্থে এলকার কয়েক হাজার মানুষ লাঠিশোঠা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভোট ঠেকাতে। এলাকাবাসী তাকে ধাওয়া করে আটক করে গণপিটুনি শুরু করে। এক পর্যায়ে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও একজন ক্যাডারকে গণপিটুনি দিয়ে হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয় জনতা।
এদিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের উজুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুড়িপোতা ইউনিয়নের বাড়িবাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পরে নৌকার প্রার্থীর ক্যাডাররা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারে। পরে প্রিজাইডিং অফিসার দুটি কেন্দ্রের শতাধিক ব্যালট বাতিল করেন।
এছাড়া কুতুবপুর ইউনিয়নের শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আধাঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
দুপুরের দিকে বুড়িপোতা ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র নৌকা প্রতীকে সিল মারতে গেলে নৌকার একজন ক্যাডারকে স্থানীয় জনতার ধাওয়া করে। পরে তিনি ধাওয়া খেয়ে ভোট কেন্দ্রের একটি টয়লেটে গিয়ে রক্ষা পায়। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশের সহায়তায় তিনি মুক্ত হন। বিকেল ৩টার দিকে কুলবাড়ীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে একজন সিল মারতে গেলে স্থানীয় জনতা তাকে গণপিটুনি দিয়ে এলাকা ছাড়া করে।
বুড়িপোতা ইউনিয়নের বাড়িবাকা গ্রামের একজন রহিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমি আসার আগেই আমার ভোট হয়ে গেছে। আমিসহ বেশকিছু ভোটার ভোট দিতে পারিনি।
এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সোহরাব হোসেন জানান, একটি ভোটের ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। আর চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ জামান (নৌকা) কেন্দ্র পরিদর্শনের সময়ে কিছু দুর্বৃত্ত কয়েকটি ব্যালটে সিল মারলেও আমরা সেটি বাতিল করেছি।
উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস জানান, ওপেন সিল মারার কারণে ১৭টি ব্যালট বাতিল করেছি। এছাড়া তিনজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
কুতুবপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কুলবাড়ীয়া, উজুলপুর, ‘শিবপুর ও সুবিদপুরে সরকারদলীয় কিছু ক্যাডার বাহিনী নৌকার পক্ষে জোর করে সিল মেরেছে। আমি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।
এদিকে গাংনীর ধানখোলা ইউনিয়নের জুগিন্দা গ্রামের সদস্য প্রার্থী জাকির হোসেনের লোকজনের হামলায় অন্য প্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) মফিজুলসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মোশারেফ হোসেন ও আবুল হোসেনকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা দাখিল মাদরাসার সামনের সড়কে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করায় চার মোটরসাইকেল চালককে এক হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু আনছার বাংলানিউজকে জানান, দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ছয়টি ইউনিয়নের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এনটি