নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থী সবাই ভাঙছেন আচরণবিধি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো নাসিক এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ ডিসেম্বর। ২০ ডিসেম্বর বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ ১৬ জানুয়ারি। ১৫ ডিসেম্বরের আগে থেকেই আচরণবিধির তোয়াক্কা করেনি কোনো প্রার্থী।
নাসিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আচরণবিধির ৫ নম্বর ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না।
জানা গেছে, নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নগরজুড়েই রয়েছে টান টান উত্তেজনা। এ নির্বাচনে সেই উত্তেজনায় আরও উত্তাপ এনে দিয়েছে বিএনপি দলীয় ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ। পরে অবশ্য দলের জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ছাড়া বাকিরা জমা দেননি মনোনয়নপত্র।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী যিনি গত দুই মেয়াদে মেয়র ও এর আগে পৌরসভা থাকলে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি ও তার পক্ষে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার তিনি বন্দরে আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে নৌকা প্রতীকের স্লোগানে বিশাল মিছিলে অংশ নিয়েছেন। সেখানে তিনি বন্দরবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন এবং দোয়া ও মিলাদে অংশ নিয়েছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের প্রভাবশালী ঠিকাদার এ কে এম আবু সুফিয়ান, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর, আহসান হাবিব, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ দলের ডজনখানেক নেতা নিয়মিত মিছিল, গণসংযোগ করে চলেছেন।
আচরণবিধি ভাঙতে কম যান না বিএনপি নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি মনোনয়নপত্র কিনতে গিয়ে ও জমা দিতে গিয়েও ভেঙেছেন আচরণবিধি। তবে নেতাকর্মীদের নিয়ে এখনো বড় ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করেননি তিনি। ১৬ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিশাল র্যালি অনুষ্ঠিত হলেও সেই র্যালিতে অংশ না নিয়ে বিজয় স্তম্ভে এসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নেতাকর্মীদের নিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন তৈমুর।
১৬ ডিসেম্বর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ বিশাল মিছিলসহ শোভাযাত্রা করে ভোট চেয়েছেন হাতপাখা প্রতীকে। নগরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল করেছেন তিনি। এর আগে মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকেই নগরে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা হাতপাখা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচারণা ও মিছিল করছেন।
বাকি মেয়র প্রার্থীদের তেমন জনসমর্থন না থাকায় তারা নীরব রয়েছেন।
অন্যদিকে নিয়মিত প্রতিটি ওয়ার্ডেই মিছিল ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে গণসংযোগ, নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনব্যাপী মিছিল ও মহল্লায় মহল্লায় নির্বাচনী বৈঠকও করছেন এসব প্রার্থীরা। এর মধ্যে এক প্রার্থীর সমর্থকদের আরেক প্রার্থীর সমর্থকরা মারধর করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।
এর আগে পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার লাগিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সে ব্যাপারে কঠোর হয় ইসি। পরে ইসি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় এসব ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন অপসারণ করেন।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মতিয়ুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আইন সবার জন্য সমান। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে দেখছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
আরবি