ঢাকা: চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ২০ উপজেলায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে মাঠ প্রশাসন। উপজেলাগুলোতে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি জেলা প্রশাসন থেকে ২০টি উপজেলার জন্য অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়। কোথাও দুজন, কোথাও তিনজন, এমনকি কোথাও পাঁচজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে সকল উপজেলার জন্য চারজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেয় ইসি।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে-চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রতি উপজেলায় চারজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন কমিশন। কিন্তু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি উপজেলায় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন।
যেসব উপেজলায় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হচ্ছে সেগুলো হলো—নাটোরের সিংড়া (তিনজন); কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর, কটিয়াদী ও ভৈরবে (তিনজন করে নয়জন); মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর (তিনজন করে ছয়জন); কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট (তিনজন ও দুজন); দিনাজপুরের খানসামা, কাহারোল ও বীরগঞ্জে (একজন, একজন ও তিনজন); মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান ও লৌহজং (পাঁচজন ও চারজন); লক্ষ্মীপুর সদর (তিনজন); পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া (তিনজন করে ছয়জন); গাজীপুর সদর ও কালীগঞ্জ (দুজন করে চারজন) এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও চৌহালী (দুইজন করে চারজন)।
ইতোমধ্যে তিন ধাপে ২ হাজার ২২৬টি ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে নির্বাচনী সহিংসতায় ৫০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে তিন শতাধিক ব্যক্তি। মাঠ প্রশাসন থেকে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের কঠোর হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করেছে। এছাড়া প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফোর্স ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় ওই ২০ উপজেলায় নিয়োজিত থাকছেন অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গত তিন ধাপের ভোটের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভোটের দুদিন আগে থেকে দুদিন পর পর্যন্ত সহিংস ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তাই নির্বাচন কমিশনও ভোটের দুদিন পর পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োজিত রাখছে ভোটের মাঠে।
ইসির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৫৮ জেলার ১১৮টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্র প্রতি মোতায়েন থাকবে পুলিশ, আনসার, অঙ্গীভূত আনসারের ২২ জনের ফোর্স।
এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের একটি করে টিম প্রতি ইউপিতে মোবাইল ফোর্স হিসেবে এবং প্রতি তিনটি ইউপির জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
প্রতি উপজেলায় র্যাবের থাকবে দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম, প্রতি উপজেলায় বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য থাকবে মোবাইল টিম হিসেবে। আর এক প্লাটুন নিয়োজিত থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। আবার উপকূলীয় প্রতি উপজেলার জন্য দুই প্লাটুন কোস্ট গার্ড মোবাইল টিম হিসেবে ও এক প্লাটুন ফোর্স থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
চতুর্থ ধাপের ৮৪২ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোট ২৯৫ জন প্রার্থী।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮ জন প্রার্থী। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৩৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৮১৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ জন প্রার্থী ভোটের লড়াই করবেন। চেয়ারম্যান পদে এই ধাপে ১৬টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংখ্যা তিন-চতুর্থাংশ।
পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। আর ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে ভোট হবে ৩১ জানুয়ারি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ