রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বাররা গলায় টাকার মালা পরে বিজয় র্যালি করছেন।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকার পাড়া-মহল্লায় বিজয় র্যালি করেন তারা।
তাদের এমন কাজে অসন্তোষ ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তাও।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডিএম বাবুল মনোয়ার। তিনি নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলামসহ সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে গলায় টাকার মালা পরে বিজয় র্যালি করেছেন। এভাবে তারা গ্রামের রাস্তা ও হাট-বাজার ঘুরেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিস জানায়, ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে চকরাজাপুরসহ ৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী ডিএম বাবুল মনোয়ার (নৌকা) ৪ হাজার ৯১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল আযম (আনারস) ৩ হাজার ১০১ ভোট পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৯ হাজার ৫৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৮৮৮ জন ও নারী ৪ হাজার ৬৪৫ জন।
এমন কাজে অসন্তোষ ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নির্বাচনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেবে মনে করছেন তারা।
ইউনিয়নটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বার প্রার্থী হেলাল উদ্দীন বলেন, সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে বিজয় র্যালি শুরু করেছেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। টাকার জোরে নির্বাচিত হয়েছেন বলেই টাকার মালা গলায় পরে বিজয় র্যালি করেছেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির মণ্ডল বলেন, সোমবার আমার ওয়ার্ডে বিজয় র্যালি করেছি। ওয়ার্ডের লোকজন হাজার টাকা, ২৫ টাকাসহ বিভিন্ন অঙ্কের নোট দিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। জানতে চাইলে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন, নিজের ইচ্ছায় টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিনি। জনগণই তাদের টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিয়ে দিয়েছে। তবে, কত টাকা দিয়ে মালা বানিয়েছে তা জানি না। সোমবার নির্বাচনী এলাকার গিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সময় ফুলের মালা ও গলায় টাকার মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তবে, পরে আমি কোন বিজয় র্যালি করিনি। টাকার মালা গলায় পরে বিজয় র্যালি করা আইন সিদ্ধ কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
পরাজিত স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ দলের বহিষ্কৃত) চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল আযম বলেন, চর এলাকার রেওয়াজ অনুযায়ী নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বারকে এভাবেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তবে, এটি আইন সম্মত না হলে বন্ধ করা উচিত।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, এটি আমাদের চর এলাকার রেওয়াজ। নির্বাচিত ব্যক্তিদের সপ্তাহব্যাপী সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বাঘা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুল আলম বলেন, বিজয়ীদের র্যালি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা বিধি-নিষেধ মানছেন না। টাকার মালা গলায় পরে বিজয় র্যালি করা একটি অশুদ্ধ কর্ম। এতে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবেন। এটি নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা। তাই আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানা এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এসএস/এএটি