ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মাঠ কর্মকর্তাদের ইসির নির্দেশ

ইউরোপ-আমেরিকা প্রবাসীদের এনআইডি সেবায় হয়রানি নয়

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
ইউরোপ-আমেরিকা প্রবাসীদের এনআইডি সেবায় হয়রানি নয়

ঢাকা: এখন থেকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, কানাডাসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের আর বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণ করতে হবে না। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই মিলবে সেবা।

বাড়িবাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এমন নির্দেশনা দিয়েছে মাঠ কর্মকর্তাদের।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রবাসী নাগরিকদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা বা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কঠিন করার ভাবনা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে কমিশন। এক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদও গ্রহণ করতে হবে না। তবে যারা বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক বা নাগরিক হতে চলেছেন, তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ইসির নির্দেশনাটি সকল উপজেলা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। নির্দেশনার অনুলিপি সকল আঞ্চলিক, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে- The Bangladesh Citizenship (Temporary provisions) Order, 1972 (P.0, No. 149 of 1972)-এর Article 2B (2)-তে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সময়ে সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত এস.আর.ও অথবা পরিপত্রের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, যুক্তরাজ্য, উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা), নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশের নাগরিককে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ দাখিলের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশের নাগরিককেও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে এবং তাঁরা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

অন্যদিকে The Bangladesh Citizenship (Temporary provisions) Order, 1978 এর Rule 4 এর sub-rule (1A) অনুযায়ী- বৈবাহিকসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশি নাগরিকের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাগরিকত্ব সনদ দাখিল করতে হবে।

অন্য এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিদেশি কোনো নাগরিক(পুরুষ-নারী) বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের (পুরুষ-নারী) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে নিমরূপ বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে:

ক) Bangladesh Citizenship (Temporary Provisions) Rules, 1978 (সংশোধন) এর Rule 4 এর Sub-rule (1) এর দ্বিতীয় শর্তাংশের clause (a) এ অনুসারে- বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে ০৪ (চার) বছর বসবাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

খ) বাংলাদেশের নাগরিককে বিবাহ করার কারণে Bangladesh citizenship (Temporary Provisions) Order, 1972, Bangladesh citizenship (Temporary provisions) Rules, 1978 এর Rule A- (I) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এস.আর.ও নং- ৩২৮ আইন২০০৮ এর (a) অনুযায়ী, বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে, আবেদনকারীকে অ্যাফিডেফিটের মাধ্যমে নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হবে। উল্লেখ্য, আবেদনকারী অ্যাফিডেফিটের মাধ্যমে নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ না করেন তবে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

২। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭ এর (ক) অনুসারে- ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমতাবস্থায়, মাঠপর্যায়ে বৈবাহিক সূত্রে কোনো বিদেশি নাগরিক (পুরুষ-নারী) কে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে তার নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের প্রমাণ হিসেবে অ্যাফিডেফিট (সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত) দাখিল করতে হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এই নির্দেশনার ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবা আরও তরান্বিত হবে। অনেকেই মাসের পর মাস ঘুরে নানা প্রশ্নবানে আটকা পড়ে ভোগান্তির শিকার হন মাঠ পর্যায়ে। ফলে তারা হতাশা নিয়েই খালি হাতে আবার ফিরে যান বিদেশে। এখন থেকে প্রবাসী কোনো নাগরিক সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও দেশের অন্য আট-দশটা নাগরিকের মতোই সহজেই ভোটার হয়ে এনআইডি সংগ্রহ করতে পারবেন।

এক-এগার সরকারের সময় এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা কার্যক্রম হাতে নেয়। সেই সময় ৯ কোটি ভোটারের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। যার ভিত্তিতেই দেশের নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এনআইডি। দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ এবং ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী ভোটার। এছাড়া হিজড়া (ট্রান্সজেন্ডার) ভোটার আছেন ৪৫৪ জন।

২০ মে থেকে শুরু হবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। যা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে প্রবাসীদের যারা দেশে অবস্থান করছেন খুব সহজেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

প্রবাসীদের স্মার্টাকার্ড
প্রবাসী নাগরিকদের জন্য পৃথকভাবে থোক বরাদ্দ রেখে স্মার্টকার্ড সরবরাহের কাজেও হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে আইডিইএ-২ নামে সরকারি তহবিল থেকে হাতে নেওয়া নতুন একটি প্রকল্প থেকে ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্যই হলো প্রবাসীদের স্মার্টকার্ড সরবরাহ, যেখানে দেশে অবস্থানকারীরা শুরুতে লেমিনেটিং করা এনআইডি হাতে পান। তবে এই কার্যক্রমটি হাতে নিলেও নানা কারণে থমকে আছে দুই বছর হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
ইইউডি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।