সিলেট: প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিয়ানীবাজারে পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে ভোট উৎসব। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগেই নানাভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে আসছিলেন প্রার্থীরা।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল প্রকাশের পর অনেকটা নড়েচড়ে বসেছেন প্রার্থীরা। এতো দিন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালালেও এবার নিজেদের প্রকাশ্যে আনছেন তারা।
পৌর মেয়রের মসনদে বসতে দেশি প্রার্থীদের সঙ্গে টক্কর দিতে মাঠে নামছেন প্রবাসীরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে ছবি ভাইরাল করাচ্ছেন। তবে, তালিকা দীর্ঘ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর। সবার একটাই প্রত্যাশা দলীয় প্রতীক নৌকা। এরইমধ্যে অনেকে লবিং-তদবিরও শুরু হয়েছে নানাভাবে।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পূর্ণ প্রস্তুতি রাখলেও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা অনেকটা নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রের ব্যানারে দলের অনেকে প্রার্থী হতে পারেন, এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলেন, এবারো ক্ষমতাসীন দলের হয়ে নৌকা পেতে পারেন বর্তমান মেয়র আব্দুস শুকুর। তবে তাকে থালি মাঠে ছেড়ে দিতে নারাজ রাজনৈতিক সতীর্থরা। পৌরসভার মেয়রের মসনদে বসতে তাদেরও চোখ নৌকায়। তারাও এবার বৈতরণী পার হতে চান নৌকায় উঠে। এরইমধ্যে অনেকে প্রবাস থেকেও চলে এসেছেন। পাড়া মহল্লায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিবিড়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
তবে গ্রামীণ শহর হওয়াতে প্রতীকে ভোট হলেও আঞ্চলিকতার ছাপ ভোটের মাঠে থাকবে, এমনটি মনে করছেন পৌরবাসী। আঞ্চলিকতার জোয়ার-ভাটায় দলীয় প্রতীকের হিসাব গৌণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরইমধ্যে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে প্রার্থী তালিকায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস শুকুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলার সদস্য আব্দুল হাসিব মনিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুস টিটু, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফারুকুল হক, কানাডা প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহবাব হোসেন সাজু, সাবেক পৌর প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন, সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে আসতে পারেন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু নাসের পিন্টু, সিপিবর উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম ও প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদ।
প্রার্থিতার বিষয়ে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস শুকুর বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিয়ানীবাজার সদর ইউনিয়নকে পৌসভায় উন্নীত করা হয়। দীর্ঘ সংগ্রাম পর পৌরবাসী ভোটের অধিকার পেয়েছে। প্রথমবার ভোটে আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মডেল পৌরসভা গঠনে কাজ করেছি। পুনরায় নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে একটি নান্দনিক ও মডেল পৌরসভা উপহার দেবো।
আব্দুল হাসিব মনিয়া বলেন, জীবনে শেষবারের মতো পৌরমেয়র হয়ে জনগণের খেদমত করার সুযোগ চাই। আমি আশাবাদী, দল আমাকে নৌকা প্রতীকে মূল্যায়ন করবে।
আব্দুল কুদ্দুস টিটু বলেন, ছাত্রলীগ থেকে পর্যায়েক্রমে দলের আন্দোলন সংগ্রামে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে ছিলাম। দুর্দিনের সৈনিক হিসেবে দল নৌকা প্রতীক দিয়ে মূল্যায়ন করবে, আশাবাদী তিনি।
সিপিবির অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নৈরাজ্য থেকে মানুষ মুক্তি চায়। জনতার স্বপ্ন পূরণে পৌরবাসী মেয়র পদে তাকে মূল্যায়ন করবে, মনে করেন তিনি।
বিএনপির আবু নাসের পিন্টু বলেন, গত নির্বাচনে ধানের শীষে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমাকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। এবার জনগণ চাইলে স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র পদে প্রার্থী হবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা গঠনের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে কমিশন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল বিয়ানীবাজার পৌরসভা গঠন হলেও মামলা জটিলতায় টানা ১৬ বছর কেটেছে প্রশাসক দিয়ে। পৌরসভা গঠনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের রায়ে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেন প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়ে কাটিয়ে দেন দীর্ঘ ১৬ বছর। এই সময়ে পৌর এলাকার মানুষ ভোট বঞ্চিত হয়েছেন বার বার। আক্ষরিত অর্থে পৌরবাসী ভোটার স্বপ্ন লালন করা বাদ-ই দিয়েছিলেন। অতঃপর নির্বাচন আদায় সংগ্রাম পরিষদের তৎপরতায় ১৬ পর আদালতের রায়ে ভোটাধিকার ফিরে পান পৌরবাসী।
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এই পৌরসভায় ভোটের আয়োজন করা হয়। এরপরও ভোট হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল নানা সংশয়। অবশেষে ভোটের লড়াইয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন মো. আব্দুস শুকুর। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী, সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচন ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদে উপ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১৫ জুন। আর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে, রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনয়ন বাছাই ১৯ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ মে। এরপর ১৫ জুন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতীহীনভাবে বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২২
এনইউ/এএটি