ঢাকা: বিভিন্ন কারণে অনলাইনে আবেদন করেও যারা ঝুলে রয়েছেন, পারেননি এখনো ভোটার হতে, তাদের সমস্যার সমাধান হবে অচিরেই। আসছে হালানাগাদ কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োজিত ব্যক্তির কাছে আবেদনের প্রিন্ট কপি জমা দিলেই হবে।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভোটার হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনলাইনে আবেদন করেছেন, এমন ১১ লাখ নাগরিকের আবেদন নিষ্পত্তি হয়নি। এ ক্ষেত্রে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অনলাইনে আবেদন করলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। এক্ষেত্রে প্রিন্ট কপি সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। সঙ্গে জমা দিতে হয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। কিন্তু আবেদনকারীদের বেশির ভাগই কোনো না কোনো পর্যায়ে গিয়ে আর যোগাযোগ রাখেননি।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের কারণে ভোটার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল বিভিন্ন উপেজলা নির্বাচন কার্যালয়ে। ফলে আবেদন জমতে জমতে তা ১১ লাখে পৌঁছে গেছে।
সম্প্রতি এ নিয়ে ইসির ভোটার তালিকা হালানাগাদ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, মে মাসে শুরু হতে যাওয়া হালানাগাদ কার্যক্রমে আবেদনগুলো নেওয়ার।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধণ অনুবিভাগের মহাপরিচালকে এ কে এম হুমায়ুন কবীর ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। তার স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণী থেকেও একই তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন, তারা অনলাইন কপি তথ্য সংগ্রহকারীর কাছে জমা দেবেন।
আগামী ২০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। এক্ষেত্রে তিন বছর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন ইসি নিয়োজিত কর্মীরা। তারা যখন বাড়ি বাড়ি যাবেন, সেই সময় অনলাইন আবেদনের প্রিন্ট কপির সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই হবে। তারপর নির্দিষ্ট তারিখে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে ফটো তোলা, দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে। এরপরই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এনআইডি পেয়ে যাবেন। আর বয়স ১৮ বছর হলে ভোটার তালিকাতেও যুক্ত হয়ে যাবেন।
এবার তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে সংগ্রহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে জন্মগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অর্থাৎ ১৬ বছর বয়সীদের তথ্যও নেওয়া হবে। যারা পরবর্তীতে বয়স ১৮ বছর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন ২০২৪ ও ২০২৫ সালে।
এ কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কর্তন এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের বিষয়েও কার্যক্রম গৃহীত হবে।
যে কাগজপত্র জমা নেওয়া হবে
নিবন্ধনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পূরণকৃত নিবন্ধন ফরম-২ এর সাথে অনলাইন জন্ম সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অথবা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা বা যে কোনো পাবলিক পরীক্ষা পাসের সনদের ফটোকপি।
এছাড়াও অন্যান্য কাগজপত্র যেমন—নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র/বাড়ি ভাড়া/হোল্ডিং ট্যাক্স/ যে কোনো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের রসিদের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩(কক) এ নামের সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদসমূহের পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধীন নিবন্ধিত নাম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে।
হিজড়া
সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেওয়ায়, তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের শনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়ন অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন লাগবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি, যে তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়।
ভোটার এলাকা স্থানান্তর
এক ভোটার এলাকা থেকে অন্য ভোটার এলাকায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ফরম-১৩ (স্থানান্তর) পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ সরাসরি স্থানান্তরিত এলাকার থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা প্রদানের পর যথাযথ যাচাই-বাছাই ও তদন্ত স্বাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা হবে।
এছাড়া, তথ্যসংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার স্থানান্তরের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কার্যালয়ে পাঠাবেন।
তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক বা কমচারী; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক বা কমচারী; সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বা সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন অফিস বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও সরকার কতৃক অনুমোদিত কিন্ডারগার্টেন ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সুপারভাইজার নিয়োগ
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ বা সমপর্যায়ের মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তা; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন।
তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজার নিয়োগের বিধানে বর্ণিত কর্মকর্তা বলতে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং কর্মচারী বলতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বোঝানো হয়েছে।
বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৯ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৯৬ জন। আর পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৪৫৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ