ঢাকা : সংসদ নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাসহ পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আনার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সোমবার (১৮ জুলাই) ইসি’র সঙ্গে সংলাপে বসে এ সুপারিশ করে দলটি।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসি’র সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্যান্য কমিশনার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সংলাপে রাজনৈতিক দলটির মহাসচিব এমএ মতিন ৯ টি সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনের সময় স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে সাংবিধানিক পন্থায় আনার ব্যবস্থা করা। যদি তা না করা হয়, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। ইসিও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না;
জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে একজন চৌকস নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার পদে নিয়োগ দিতে হবে; প্রিসাইডিং অফিসারকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় যেকোনো অভিযোগ দ্রুত সময়ে মীমাংসা করার ক্ষমতা ন্যস্ত করা; এ ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার বিধানও প্রণয়ন করতে হবে। তবে নৈতিকভাবে পদস্খলিত বা অসদুপায় অবলম্বনের অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রিসাইডিং অফিসারকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; গোপন কক্ষে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নজরদারি নিশ্চিত না করলে জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না।
জনগণের টাকা আত্মসাৎকারী কোনো ঋণখেলাপী যেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ এ ধরনের কেউ প্রার্থী হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।
নির্বাচনী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত টিম গঠন করার পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন। এ টিম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ যেকোনো গুরুতর অভিযোগ দেওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা প্রশাসন তা দ্রুত সময়ে যেন পদক্ষেপ নিতে পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে ‘জনতার মুখোমুখি সংসদ সদস্য প্রার্থী’ শিরোনামে উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। এ ধরনের আয়োজনে প্রার্থীরা জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ইভিএম মেশিনে নয় বরং স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি সম্বলিত আরপিও আইন সংশোধন করতে হবে; এ ধরনের আইনের বিপরীতে আমাদের প্রস্তাবনা হলো- রাজনৈতিক দলগুলোতে নারী রাজনৈতিক কর্মীদের নেতৃত্ব দিতে আলাদা উইং সৃষ্টি করা তথা আলাদা প্লাটফর্ম সৃষ্টি করে তাদের নেতৃত্বের বিকাশ সাধন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল পরিচালনায় স্বাধীনতা রাখতে হবে।
আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। ইতিমধ্যে চারটি দলের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল সংলাপে অংশ নেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
ইইউডি/এমজে