ঢাকা: ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সিদ্ধান্ত বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও প্রকট করে তুলবে কি-না, তা নিয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে চান না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার (২৪ আগস্ট) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) জানায় ইসি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ সিদ্ধান্তের ফল ভালো হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সিইসি বলেন, আমরা ইভিএম নিয়ে চট জলদি কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং টেকনিক্যালিও ইভিএম নিয়ে যে ধোয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে, ওটা কতটা নির্ভরযোগ্য বা সত্য, ওটাও আমরা পরখ করে দেখার চেষ্টা করেছি। আমরা বিভিন্ন দলকে বলেছিলাম আপনাদের টেকনিক্যাল পারসনদেরকে নিয়ে আসেন। ওনারাও এসেছিলেন। ইভিএম নিয়ে যে বক্তব্য চাউর হয়েছে- ‘এখানে ভোট দিলে ওখানে চলে যাবে’, আমরা আজ পর্যন্ত এর কোনো সত্যতা পাইনি এবং তারাও দেখাতেও পারেননি।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন আমরা অনেকগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেছি ও দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ১৫০, ১৫০; এই ভাবে ভাগ করে ইভিএমটাকে ব্যবহার করবো। এটা নিয়ে যে কথাগুলো চালু আছে, সেগুলো নির্বাচনের পরেও কিন্তু বোঝা যাবে। যদি দেখা যায় ফলাফলের ধরণ… এতেও বোঝা যাবে। আমরা পুরোপুরি আস্থাশীল হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যালট পেপারে যে সমস্যা হয় তার জবাব ইভিএমে ভালভাবে পাওয়া যাবে। কেননা, সহিংসতা, কারচুপি সম্ভব হয় না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কোনো দলের চাওয়ার পক্ষে, বিরোধীদের বিপক্ষেও নয়। একাধিক দল ইভিএমের বিপক্ষে বলেছে। আমরা সবার মতামত নিয়েছি। সম্ভব হলে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করবো। এখন সম্ভব হবে কি-না জানিনা।
বিএনপি যদি পরবর্তীতে কোনো দাবি নিয়ে আসে তখন কী করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি তিনি বলেন, উনারা আসলে হয়তো আলোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সব দলের মতামত আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। ভোটকে হ্যান্ডেল করার দায়িত্ব ইসির। কিভাবে ভোট করলে স্বাচ্ছন্দ্য হতে পারে, সুষ্ঠু হতে পারে এবং ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, সেটা আমাদের মূখ্য বিবেচনার বিষয়। দলগুলোর কে কি বলেছে তা মূখ্য বিবেচনায় আসেনি। তবে তাদের বক্তব্যগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। একই সঙ্গে কোটি কোটি যে ভোটার আছেন, তারা যাতে আরও ভালোভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই বিষয়টাকে বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এখন ইভিএমের ক্ষেত্রে ওই ধরনের মাস্তানি কেউ করলে তা মোকাবেলা করতে হবে। আমরা তা করবো।
চলমান রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও বড় বিতর্ক তৈরি হলো কি-না এবং ৩০০ আসনেই ব্যবহার করতে চাচ্ছেন না কেন- এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে সিইসি বলেন, ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারে সামর্থ্যের একটা বিষয় আছে। ৩০০ আসেন যাচ্ছি না কারণ এতে আরেকটা সুযোগ হলো যে, ১৫০টিতে ইভিএম, ১৫০টি ব্যালট; এতে তুলনা করা যাবে। আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশি নিশ্চিত হতে পারবো যে ইভিএম দিয়ে কী মন্দ হচ্ছে, না উত্তম হচ্ছে। সঙ্কট ভবিষ্যতে কী হবে, আপনারা অপেক্ষা করেন, আমরাও অপেক্ষা করি। দেখি কী হয়। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা জানিয়েছি।
ভবিষ্যত আমরা বলতে পারি না। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সঙ্কট ছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়েও সঙ্কট ছিল। এবার আদৌ নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট হবে কি না তা তো বলা যাবে না।
আপনি অংগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে অংশগ্রহণমূলক কী হবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
ইইউডি/এসএ