ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

জাল টাকায় ভোট বেচে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ভোটাররা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
জাল টাকায় ভোট বেচে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ভোটাররা!

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী সদস্য প্রার্থী সুমন সরকারের বিরুদ্ধে জাল টাকায় ভোট কেনার অভিযোগ উঠেছে। আগের রাতে ভোটারদের টাকার বান্ডল দেন তিনি।

 

ভোটের দিন সোমবার (১৭ অক্টোবর) টাকা নিয়ে তাকে ভোটও দেন অনেকে। কিন্তু ভোট শেষে বাজার করতে গিয়ে দেখা যায় টাকাগুলো নকল। বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেই তিনি হুমকি দেন, নকল টাকা যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেই পুলিশ ধরবে। এরপরই মুখে কুলুপ এঁটেছেন ভোটাররা।  

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী হিসেবে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তিনি গতবারও জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে তিনি বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যকে জাল টাকা দিয়ে ভোট কিনেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।  

রায়গঞ্জের সাংবাদিক শেখ মোস্তফা নুরুল আমিন সোমবার বিকেলে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আজ জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার এক সদস্য প্রার্থী জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পক্ষে ভোট আদায়ের কৌশল হিসেবে ভোটারদের (সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার) টাকার বান্ডল দিয়েছেন গত রাতে। আজ ভোট দিয়ে কিছু কেনাকাটা আর ফুর্তির জন্য বের হন তারা। কিন্তু পরখ করে দেখেন, রাতের অন্ধকারে কেনা-বেচার সব টাকাই জাল। কয়েক মেম্বার তাদের সেই প্রার্থীকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে, তাকেই কিন্তু পাকড়াও করবে পুলিশ। এ কথা শুনে স্তব্ধ হন তারা। ভোট কেনা-বেচার বাজারে এভাবে কত কিছুই না ঘটছে। ’

এছাড় কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘ভোট দিয়েই ভোটাররা খেলেন ধরা। ’ 

এসব বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ফিরোজ উদ্দিন খান বলেন, ভোটারদের মধ্যে টাকা ছড়িয়ে কোরআন শরীফ ছুঁইয়ে ওয়াদা করিয়ে ভোট নিয়েছে। এটা এখন সর্বস্তরের জনগণই জানে। তবে জাল টাকা দিয়েছে কিনা, সেটা ভোটাররাই বলতে পারবে। শোনা যাচ্ছে, গতকাল ঘুড়কা বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে ভোটাররা দেখেন, তারা জাল টাকা পেয়েছেন। ধানগড়া বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েও জাল টাকা শনাক্ত করতে পেরেছেন কয়েক মেম্বার।  

তিনি আরও বলেন, গতবারও আমি প্রার্থী ছিলাম, ৬৯ ভোটের মধ্যে ২২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। এবার ১৩০ ভোটের মধ্যে পেয়েছি নয় ভোট পেয়েছি। এটা কীভাবে সম্ভব হলো বুঝলাম না। আমি ব্যক্তিগত সম্পর্কে ভোট প্রার্থনা করেছি, অর্থনৈতিক সম্পর্কে নয়।  

অপর পরাজিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বলেন, জাল নোটের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। তবে কে কাকে জাল টাকার বান্ডল দিয়েছে, সেটা জানা নেই।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়ী প্রার্থী সুমন সরকার বলেন, আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বিজয়ী হয়েছি। কোনো টাকার লেনদেন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পরাজিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। টাকা লেনদেন এবং জাল টাকার বিষয়ে যারা ফেসবুকে লিখেছেন, তাদের অবশ্যই প্রমাণ দিতে হবে।  

রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয় বলেন, আমরা সকাল থেকেই শুনছি জাল টাকায় ভোট কেনার বিষয়টি। আসলে সেটি প্রমাণ করা কঠিন। কারণ ভোটের মাঠে টাকা লেনদেন অপরাধ। আর জাল টাকার লেনদেন তো আরও বড় অপরাধ। তাই টাকা লেনদেনকারী কেউই বিষয়টি স্বীকার করবে না।  

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সকালে বলেন, নির্বাচনে অর্থ লেনদেন হয়ে থাকলেও আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই।

জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, এমন কোনো অভিযোগ কেউ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।