ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: সার্বিক পরিবেশে সন্তুষ্ট প্রার্থীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৩
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: সার্বিক পরিবেশে সন্তুষ্ট প্রার্থীরা

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশে সন্তোস প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। এতে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রধান দুই দল নৌকা ও লাঙলের প্রার্থীরা।

শেষ পর্যন্ত একই পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমনই অভিমত প্রকাশ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ও জাতীয় পার্টির গোলাম শহীদ রনজুসহ অপর প্রার্থীরা।

বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পরপরই সাঘাটা উপজেলার ফলিয়া দিগর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন মাহমুদ হাসান রিপন।

সকাল পৌনে ৯টার দিকে বোনারপাড়া কাজী আজহার আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে  ভোট দেন জাতীয় পার্টির গোলাম শহীদ রনজু।

ভোট দেওয়া শেষে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সাঘাটা-ফুলছড়িবাসীর মধ্যে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসছেন। আমি বিশ্বাস করি এ অঞ্চলের মানুষ ভোট দিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রনজু বলেন, ভোট দেওয়া নিয়ে মানুষের মাঝে যেমন শঙ্কা আছে, তেমনি আমিসহ আমার নেতা-কর্মীদেরও শঙ্কা রয়েছে। তবে, ইসি-প্রশাসনের সার্বিক তৎপরতায় এখন পর্যস্ত সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এ পরিবেশ বহাল রাখতে প্রশাসনসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার কাছে দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত জনগণ সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পালে লাঙলের জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

অভিযোগ নেই,  নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপর দুই প্রার্থী বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও স্বতন্ত্র সৈয়দ মাহবুবুর রহমানেরও (ট্রাক)।

এর আগে বুধবার সকাল থেকেই ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন ভোটাররা। যদিও ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। তবে, বেলা বাড়ার সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রে বাড়তে থাকে ভোটারের উপস্থিতি। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

নির্বাচনে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী (জাপা) এএইচএম গোলাম শহিদ রঞ্জু (লাঙ্গল)।  এছাড়া ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা যায়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে (ট্রাক)। আর গত ২৫ ডিসেম্বর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

এদিকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যের নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরায় কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ চলাকালে কোনো অনিয়ম হলে তা কঠোরভাবে দমন করার কথাও জানান তিনি।

এছাড়া নির্বাচনে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভোটের মাঠে বিজিবি, র‍্যাবের মোবাইল টিম, পুলিশের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কামাল হোসেন।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

আসনটিতে গত ১২ অক্টোবর উপ-নির্বাচন চলাকালে প্রথমে গোপন কক্ষে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করায় ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং সাঘাটা উপজেলার রামনগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি।

অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫১টি ভোটকেন্দ্রের ঘটনা তদন্ত করে গত ২৭ অক্টোবর ইসিকে প্রতিবেদন দেয়। পরে বাকি ৯৪টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ছিল কি না, তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় ইসি। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় কমিটি ওই প্রতিবেদন জমা দেয়।

তদন্তে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ মেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের পাঁচ উপ-পরিদর্শক (এসআই), ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাসহ ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তদন্ত শেষে গত ৬ নভেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

বাংলাদেশ সময়:১৫১৫ ঘণ্টা, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩

এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।