ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

পৌর নির্বাচন

ঈশ্বরগঞ্জে ভোটের লড়াইয়ে মা-ছেলে

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
ঈশ্বরগঞ্জে ভোটের লড়াইয়ে মা-ছেলে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: মা চান লড়াই করে যেতে। আর ছেলে চান মা সরে দাঁড়াক নির্বাচনী মাঠ থেকে।

ভোটের লড়াইয়ে মা অভিজ্ঞ হলেও ছেলে নবীন। মা-ছেলের বিপরীতমুখী এ লড়াই ঈশ্বরগঞ্জবাসীর মধ্যে আলোচনা ও কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মা জুলেখা খাতুন সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর পদে আর ছেলে দেলোয়ার হোসেন রিপন মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে মা-ছেলের মাঝে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। তবুও তারা অনড় নির্বাচনের সিদ্ধান্তে।

পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাকনহাটি এলাকার বাসিন্দা জুলেখা গত পৌরসভা নির্বাচনে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এবারও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

কিন্তু বেঁকে বসেছেন তার ছেলে উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রিপন। এবার তিনি মেয়র পদে দল থেকে সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে মা-ছেলে দু’জনেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। মা জুলেখাও আওয়ামী লীগ সমর্থক।

ছেলে রিপন মা’কে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিজের পক্ষে কাজ করানোর চেষ্টা করছেন, এমন অভিযোগ করেছেন মা জুলেখা খাতুন। কিন্তু রিপন এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘গতবার মাকে আমিই ওয়ার্ক করে কাউন্সিলর পদে জিতিয়ে এনেছি। একটি মহল ভুল বুঝিয়ে এবারও তাকে প্রার্থী করেছে। ’

রোববার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় উপজেলা পরিষদের সামনে রিপনের দেখা মিললো। সেখানে একটি হোটেলের ভেতরে ঢুকেই হাত মেলাতে শুরু করলেন বসে থাকা লোকজনের সঙ্গে। তার পেছন পেছন ছুটতে দেখা গেলো জনা পাঁচেক কর্মীকে।

মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণ জানাতে চাইলে রিপন বলেন, ‘দামদি, কাকনহাটি ও পাইবাকুড়িবাসী চায় না আমি দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করি। তাদের ইচ্ছাতেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। কেউ কেউ আমার মাকে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ’

রিপনের দাবি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে তিনি টিকে যাবার পর তার মা জুলেখা খাতুন নির্বাচনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলেছেন। বললেন, ‘মা ভেবেছিল আমি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে এ টিকবো না। তাই তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এখন আর মা নির্বাচন করবেন না’।  

মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ সাত্তার ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ বুলুর চেয়ে ভোটের মাঠে নিজেকে যোগ্য মনে করেন রিপন। বলেন, ‘সাত্তার সাহেব গতবারও ফেল মেরেছেন। বুলু সাহেব দুই টার্ম গো হারা হেরেছেন। তাদের চেয়ে নতুন প্রার্থী হিসেবে আমার প্রতি পাবলিকের আগ্রহ বেশি। আমার কিছু নাই, হার-জিতেও সমস্যা নাই। ’

মেয়র প্রার্থী হাবিবের সঙ্গেই তার ভোটযুদ্ধ হবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে মা জুলেখা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছেলে নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছে। চাপের মধ্যেই মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে টিকেছি। এ নিয়ে ছেলের সঙ্গে আমার দূরত্বও তৈরি হয়েছে। ’

ছেলে রিপনের জয়ের সম্ভাবনা আছে কি-না এ প্রসঙ্গে কৌশলী জুলেখা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেকে আমি এ কথাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমি নির্বাচন করলে আবারও জেতার সম্ভাবনা আছে। ১৯৯৭ সালেও আমি এ পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলাম। কিন্তু ও নাছোড়বান্দা। কে বা কারা ওরে ভুল পরামর্শ দিয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।