দিনাজপুর শহর থেকে: দরজায় কড়া নাড়ছে পৌরসভা নির্বাচন (আগামী ৩০ ডিসেম্বর-বুধবার)। তাই প্রচারণায় ফিকে হয়ে গেছে তীব্র শীতও।
সচেতন ভোটাররা চায়ের দোকান, স্টেশন, মার্কেটসহ বিভিন্ন সড়কে প্রার্থীদের এসব ইতিহাস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে মজেছেন। অনেক ভোটার বলছেন, দলীয় ব্যানারে ভোট হলেও যোগ্য প্রার্থী হওয়া চাই। কোনো কোনো ভোটার আবার বলছেন, পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজ সরকারের কাছ থেকে বের করে আনতে পারবেন এমন প্রার্থীকে মেয়র চান।
দিনাজপুর পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন মোট পাঁচ প্রার্থী। যার মধ্যে- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী (শহরের দলীয় সভাপতি) আনোয়ারুল ইসলাম, বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় পার্টির আবদুল মোতালেব এবং স্বতন্ত্র হিসেবে আলতাফ উদ্দিন ও ফয়সাল হাবিব সুমন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মূলত লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই। সমর্থন-জনমত তাদের পক্ষেই বেশি।
পৌরসভায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করে স্থানীয় মন্ত্রণালয় বিভাগ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- প্রয়োজনের তুলনায় ক্ষমতার বলে পৌরসভায় অতিরিক্ত দলীয় লোক নিয়োগ, একক ক্ষমতায় পৌর করের টাকা কমিয়ে আর্থিক ক্ষতি করা ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো নিয়ে চায়ের দোকানসহ সব স্থানে কানাঘুষা চলছে ভোটারদের মধ্যে। বিষয়গুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বিএনপি প্রার্থীর ক্ষেত্রে- বলছেন অনেকে।
স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শরিফুল বাংলানিউজকে বলেন, যাকে ভোট দিয়ে পৌর সভার উন্নয়ন হবে তাকেই দেবো ভোট। আমাদের ভোট নিয়ে কেউ দুর্নীতি-অনিয়ম করবেন তা হবে না। আমাদের মেয়র (বিএনপি প্রার্থী) অনিয়ম করে পৌরসভায় লোক নিয়োগ দিয়েছেন, আজকে তিনিই আবার দলীয় ক্যাডার নিয়ে ভোটে লড়ছেন।
দিনাজপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারই ৫৯ হাজার ৬৯৭ জন। ১২টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৯টি।
এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলামের নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও তার ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়ার বিষয়টি ভোটারদের সামনে উঠে আসছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বোন বিলকিস আরা ফয়েজ দিনাজপুর পৌর মহিলা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ভাই জহুরুল ইসলাম শহর বিএনপির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য।
এছাড়া আরও রয়েছে দলীয় কোন্দলও। দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ও দিনাজপুর-২ আসনের এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এক গ্রুপে রাজনীতি করেন। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম অন্য গ্রুপে রাজনীতি করেন।
ফিজার-খালিদ গ্রুপ চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেন পৌর মেয়র প্রার্থী হোক। পৌরসভায় একটি সুরও উঠেছিল মির্জা আশফাক প্রার্থী হচ্ছেন। তবে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পৌর মেয়র প্রার্থী হন হুইপের অনুসারী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম।
এই প্রসঙ্গে ১০নং ওয়ার্ডের ভোটার আতিকুর রহমান লাভলু বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীর যেমন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে দলীয় সমস্যা। দলীয় ব্যানারে ভোট হলেও আমরা দেখবো প্রার্থীর কতটা সৎ।
১০নং ওয়ার্ডের ভোটার পাপ্পু বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা করে অন্যদিকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বিএনপির প্রার্থী। সে হিসেবে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেবো।
তবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও দলীয় কোন্দল রয়েছে এখানে। জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরীর মধ্যে সম্পর্ক দা কোমড়ার মতো। বিএনপির প্রার্থী সভাপতির পছন্দের। এতে করে দলীয় কোন্দলে বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন অন্য প্রার্থীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অনেক প্রার্থী বলছেন- যাকে ভোট দিয়ে পৌর উন্নয়ন হবে তাকেই ভোট দিতে হবে। অনেকে চাইছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী মেয়র হোক। কারণ এতে উন্নয়ন সহজ হবে। কেন্দ্রে থেকে নানা ধরনের প্রকল্প নিয়ে এসে পৌর এলাকায় বাস্তবায়ন হবে।
অটোবাইক চালক আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, যাকে ভোট দিয়ে কাজ হবে তাকেই ভোট দেবো। যে পার্টি ক্ষমতায় সেই প্রার্থী মেয়র হলে ভোট কাজে লাগবে।
অনেকের কাছে রিজিকের টাকা সংগ্রহের জন্য ভোটের উত্তেজনা ফিকে। তেমনি একজন দিনাজপুর শহরের লিলির মোড়ের বাসিন্দা মো. আবু (৬০)। কোনো মতে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবন চলে তার।
চাচা কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ আবু বলেন, ‘যে হামার দুখ-সুখে দেখিবে যাক দিয়া হামার কাজ হবি তাকই ভোট দিম্। অ্যালাও কহা যাবে না কে হবি মেয়র উপরওয়ালা ছাড়া। এই ঠেনা হামাঘোরে কেহো দ্যাখেনা’।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এমআইএস/আইএ