উলিপুর (কুড়িগ্রাম) থেকে: কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজাদুর রহমান তালুকদার সাজু এবং তারিক আবুল আলা চৌধুরীর নাম বেশি উচ্চারণ হচ্ছে ভোটারদের মুখে।
এখানে প্রচারে পিছিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হামিদ সরকার।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) উলিপুরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজু সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদার।
সাজু গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন ও মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। গত পৌর নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
ওই পরাজয়ের পর থেকেই পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। পৌর এলাকার শ্রমজীবী মানুষ এবং তরুণদের মধ্যে তার বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, সাজুকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলে তার ধারে কাছে কোনো প্রার্থী দাঁড়াতে পারতো না। যদিও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাননি।
তবে তিনি আওয়ামী লীগ ঘরানার ভোটকে প্রভাবিত করবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
বিএনপির প্রার্থী তারিক আবুল আলা চৌধুরী উলিপুরের স্থায়ীভাবে থাকেন না। ব্যবসার কারণে ঢাকায় থাকেন তিনি। এলাকায় তার খুব একটা পরিচিতি নেই, তিনি নিজেও পৌরসভার প্রতিটি এলাকা এবং এলকার মানুষকে চেনেন না।
ভোটাররা বলছেন, নির্বাচিত হলেও ঢাকায় চলে যাবেন তারিক। এলাকায় তাকে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া তারিক চৌধুরীর পূর্ব পুরুষও উলিপুরের স্থানীয় নন।
ভারতের বর্ধমান থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন তার বাবা। তিনি (তারিকের বাবা) একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় উলিপুরের শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন।
১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে তারেক বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। এলাকায় মানুষের কাছে তার ইমেজ না থাকলেও বিএনপি দলীয় প্রার্থীর শক্ত অবস্থান রযেছে এখানে।
তাই তার পক্ষে দলীয় ভোটের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকেও টানার নানা কৌশল নিয়ে মাঠে কাজ করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে তার গলার কাটা হতে পারে বিএনপির একটি বিরোধী পক্ষ।
সূত্র জানায়, উলিপুরে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলা কমিটির সহ সভাপতি ও উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
দলীয় সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মনোনয়ন জমা দেন তিনি। কিন্তু বাছাইয়ে তা বাতিল হয়ে যায়। তাই ক্ষুব্ধ রাজ্জাক প্রকাশ্যেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন।
জানা যায়, গত নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হামিদ সরকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারেন না, যোগাযোগও রক্ষা করতে পারেন না।
তাছাড়া নিজের দল ক্ষমতায় থাকার পরও মেয়রের দায়িত্বে থেকে এলাকার তেমন একটা উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার বলেন, আব্দুল হামিদ এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। সেখান থেকে এসে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে গতবার মেয়র হন। কিন্তু এলাকার তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনি।
তাকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগে একটা বিভক্তিও দেখা দিয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে প্রচারের দিক থেকেও পিছিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হামিদ সরকার।
পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তার মার্কা নৌকা প্রতীকের পোস্টার তেমন একটা চোখে পড়েনি। পৌর শহরের দুই একটি জায়াগায় হামিদের কিছু ছেঁড়া, মলিন পোস্টার রশিতে ঝুলতে দেখা গেছে।
শহরের যেসব জায়গায় পোস্টার দৃশ্যমান হচ্ছে তার অধিকাংশই বিএনপি প্রার্থীর ধানের শীষের; আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজুর খেজুর গাছ এবং জাতীয় পাটির লাঙ্গল মার্কা।
এ তিন প্রার্থী ছাড়াও উলিপুরে মেয়র পদে লড়ছেন জাতীয় পাটির শফিকুল ইসলাম দারা, জাতীয় পাটি (জেপি) মোজাম্মেল ঘশ মানিক এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীর আলম।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এসকে/এমএ