সুনামগঞ্জ থেকে: পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পাল্টে গেছে সুনামগঞ্জ পৌরসভার চালচিত্র। একদা এখানে পৌরসভা নির্বাচন এলে দু’টি পরিবার থেকে দু’জন মেয়র প্রার্থী হতেন।
সে চিত্র পাল্টে এখন মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন ‘দল’ থেকে। পরিচয়ও দিচ্ছেন ‘দলীয়’। মিছিল-মিটিংও চলছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কার্যালয়ে। স্থানীয় নির্বাচনে এখন ‘দলীয়’ প্রার্থীকে নির্বাচিত করার যাবতীয় কৌশল-পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেসব মিছিল-মিটিংয়ে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার স্টেশন রোড এলাকায় বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, দলীয় প্রতীক বরাদ্দ হওয়ায় এবার সুনামগঞ্জের ‘পারিবারিক’ নির্বাচনের রেওয়াজ ভাঙতে যাচ্ছে। আর ‘বখত’ ও ‘রাজা’ পরিবারের ‘সঙ্গে’ নয়, এবার সুনামগঞ্জ পৌরসভাবাসী নির্বাচন করবে ‘নৌকা-ধানের শীষ’র ‘সঙ্গে’ থেকে, ‘দলে’ বিভক্ত হয়ে।
১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ পৌরসভায় সর্বশেষ মেয়াদের মেয়র ‘বখত’ পরিবারের আইয়ুব বখত জগলুল। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা হলেও বখত পরিবারের মেয়র বলেই পরিচিত জগলুল। তার আগে টানা তিন দফায় মেয়রের (নির্বাচিত) দায়িত্ব পালন করেন হাছন রাজা’র প্রপৌত্র মমিনুল মউজদীন। একসময় জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও মউজদীন পরিচিত ছিলেন ‘রাজা’ পরিবারের মেয়র হিসেবেই।
এবার সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াই করছেন তিন জন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের আইয়ুব বখত জগলুল (নৌকা প্রতীকে), বিএনপির অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ (ধানের শীষ প্রতীকে) এবং স্বতন্ত্র রাজা পরিবারের (হাছন রাজার প্রপৌত্র) দেওয়ান গনিউল সালাদীন। এছাড়া, এখানে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪৩ জন, আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৩ জন।
‘দলীয়’ নির্বাচন নিয়ে স্টেশন রোডের চা দোকানে আলাপ করছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক মাসুম হেলাল, ইজারাদার আমির উদ্দিনসহ কয়েকজন। তারা বলছিলেন, নৌকা-ধানের শীষ আসায় এবারের নির্বাচনটা আর দু’টি পরিবারে থাকছে না। হলে এই দুই পরিবার থেকেই হবে, এমন কথাও থাকছে না। এবার লড়াই দলীয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হবে।
মাসুম হেলাল বলেন, সুনামগঞ্জ পৌর নির্বাচন আগে বখত ও রাজা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার এ পারিবারিক বলয় ভেঙে দলীয় পরিচয় নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কর্মীরা তাদের প্রার্থীদের জন্য সদলবলে মাঠে নামবেন। এতে নির্বাচনে একটা আমেজ আসবে।
আমিরউদ্দিন বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনও সুনামগঞ্জ নীরব। ইলেকশন সিলেকশনের পর্যায়ে যাচ্ছে কিনা সে নিয়েই চিন্তায় ভোটাররা। এজন্যই শহর নীরব এখনও। হয়তো পারিবারিক বলয় ভাঙার সুযোগ আসায় এ নীরবতা কাটতে পারে।
তাদের সঙ্গে আলাপের পর বেরিয়ে আলফাত স্কয়ারের (ট্রাফিক পয়েন্ট) দিকে আসতে দেখা হয় ইকবাল আহমেদ, সাদিক ও রাসেল নামে তিন তরুণের সঙ্গে। তারা বলেন, কোনো পরিচয় দেখার বিষয় না। যারা তারুণ্যকে, তারুণ্যের চাহিদা বুঝতে পারবেন, পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করবেন বলে মনে হবে তাদের ব্যালটেই ভোট ফেলার বিবেচনা করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এইচএ
** নৌকা-ধানের শীষ নয়, লড়াই কালাম-শামছুর
** ছাতকে ‘ফ্রি চা-পানি’, মিলছে ‘টেকা-টুকা’ও
** জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা
** ওপারে শীতের চাদর, এপারে নির্বাচনী উত্তাপ
** বছর ধইরা মাঠ ঠিক করছি, এখন সরতাম কিতার লাগি
** লাখ লাখ টেকার ভুট এক হাজারে বেচিয়া কতদিন খাইবা?
** এখানে কুনো ভুটো কারচুপি অইছে না
** ডিজিটাল রেল, সময়ানুবর্তী রেল