নন্দীগ্রাম থেকে ফিরে: নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার ভোটের হিসাব জটিল হয়ে উঠছে। কেননা বিএনপির দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপির দুই বিদ্রোহী প্রার্থী।
তবে এদের মধ্যে একজনকে অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরও তিনি নিজেকে বিএনপির একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে মনে করেন।
ফলে এই নির্বাচন ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রার্থীরা নেমেছেন ত্রি-মুখী লড়াইয়ে। দলীয় প্রতীক ধানের শীষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মোবাইল ফোন ও জগ প্রতীকের পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে পুরো নির্বাচনী এলাকা।
এদিকে বিএনপির তিন প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তিনি তা মনে করছেন না। জাসদের প্রার্থীকে নিজের জিতে আসার পথের কাঁটা মনে করছেন তিনি।
কারণ জাসদের প্রার্থীর বড় ভাই এ আসনের এমপি হওয়ার সুবাধে তিনি ভাইয়ের পক্ষে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পক্ষান্তরের বিএনপির প্রার্থীরা সুবিধা পাচ্ছেন। তবু এবার ধানের শীষের উর্বর মাটি কেটে সৃষ্ট নৌপথে নৌকা ভাসবে বলে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দাবি করেন।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নির্বাচনী হালচাল সম্পর্কে জানতে মেয়র প্রার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য উঠে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুশান্ত কুমার শান্ত ধানের শীষ প্রতীক, স্বতন্ত্র ব্যানারে বিদ্রোহী হিসেবে পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি একেএম ফজলুল হক কাশেম মোবাইল ফোন প্রতীক ও কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (বহিষ্কার হওয়া) জগ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন।
এসব প্রার্থীরা স্ব স্ব প্রতীক নিয়ে জোর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দলীয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। আবার প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারেও অত্যন্ত আশাবাদী। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে তাদের তিনজনের যে কোনো একজন এই নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনবে বলেও তারা মনে করেন।
পৌরসভার বর্তমান মেয়র সুশান্ত কুমার শান্ত বাংলানিউজেক জানান, তার আমলে এই পৌরসভায় প্রায় ২৪কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১০কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। তিনি দুইবার সদর ইউনিয়নের নির্বাচিত মেম্বর ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান মেয়াদে নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এবারো তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তাই পৌরসভার উন্নয়নে তার কোনো বিকল্প নেই। ফলে জনগণ এবারো তাকে নির্বাচিত করবে বলে তিনি মনে করেন। তার দলের অপর দুই প্রার্থীর ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেন নি।
পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী একেএম ফজলুল হক কাশেম বাংলানিউজকে জানান, প্রথম শ্রেণি পৌরসভা হিসেবে নাগরিক সেবার মান নেই। রাস্ত-ঘাট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এসব সমস্যাকে সামনে রেখে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। তিনিও জয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। একই কথা জানান আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিষ্কার হওয়া) কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল।
তবে এই তিন প্রার্থী চরম আশাবাদী হয়ে বলেন, জয়-পরাজয় তাদের মধ্যেই নির্ধারণ হবে। এই পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের কোনো সুযোগ নেই। কেননা বর্তমান সরকারের জুলুম নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ট। আর নির্যাতিতরা কখনই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেবে না বলে তারা মনে করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দলীয় প্রার্থী রফিকুল ইসলাম পিংকু বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান মেয়র পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। নাগরিকদের প্রথমশ্রেণির সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারেনি। তবে জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়িয়েছে। এতে করে মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। ধ্বংসে বিশ্বাস করে না। বিএনপি তথা জোটের কাজ হলো ধ্বংস করা। তারা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনে জনগণ অবশ্যই বুঝেশুনে ভোট দেবেন। সেক্ষেত্রে এলাকার ছেলে হিসেবে আমি সবার কছে দায়বদ্ধ। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সব সময় আমার নজর থাকবে। জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবো।
মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম পিংকু জানান, এবার ধানের শীষের উর্বর মাটি ভোটের মাধ্যমে ভোটাররা অবশ্যই কেটে দেবে। সেখান দিয়ে নৌপথের সৃষ্টি হবে। সেই পথে নৌকা ভেসে জয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী।
তবে জাসদের প্রার্থী একেএম মাহবুবার রহমান মশাল প্রতীক নিয়ে তাকে ভীষণভাবে জ্বালাতন করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। কেননা তার বড় ভাই রেজাউল করিম তানসেন নন্দীগ্রাম-কাহালু আসনের এমপি। সেই সুবাধে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভাইয়ের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনসাধারণকে নানাভাবে কষ্ট দিচ্ছেন। এতে করে আমার ক্ষতি হচ্ছে। পক্ষান্তরে এমপি সাহেব বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে আওয়ামী লীগ দলীয় এই প্রার্থী অভিযোগ করেন।
বিষয়গুলো তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও রিটানিং কর্মকর্তার আনোয়ার ইমামের কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
তবে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও জাসদের মেয়র প্রার্থী একেএম মাহবুবার রহমানকে পাওয়া যায়নি। ফলে এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
** পোস্টারে পোস্টারে ভিন্ন সাজে নন্দীগ্রাম
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এমবিএইচ/এসএইচ