ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

পৌর নির্বাচন

হত্যা মামলা লড়ছেন ৩৬ মেয়র প্রার্থী

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
হত্যা মামলা লড়ছেন ৩৬ মেয়র প্রার্থী

ঢাকা: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ৩৬ জন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলা। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭ জন, বিএনপির ১৫ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ১৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।

তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় মোট মামলা সংখ্যা ৪৭টি।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামায় রয়েছে এসব তথ্য।  

শুধু তাই নয়, অতীতের হিসেব কষে সংখ্যাটি আরও বড় হয়। বর্তমানে ৩৬ জন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকলেও প্রার্থীদের আরও ২৫ জন আগে কোনও না কোনও হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। সব মিলিয়ে ৬১ মেয়র প্রার্থী কখনো না কখনো হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২২ জন, বিএনপির ১৯ জন, স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ২০ জন।   আর তাদের বিরুদ্ধে মোট হত্যা মামলা হয়েছে ৭৭টি। অন্তত ৫ জন রয়েছেন যারা আগেও হত্যা মামলার আসামি ছিলেন এখনও হত্যা মামলার আসামি হয়েই নির্বাচন লড়ছেন।  
 
দুই নির্বাচনেই অংশ নিয়েছেন এমন ৫ জন প্রার্থী হত্যা মামলার আসামি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী উভয় সময়ে হত্যা মামলার আসামি নন। বিএনপির রয়েছেন ২ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ৩ জন।
 
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- উভয় দলের মামলার হিসাব কাছাকাছি। আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নামে বেশি মামলা ছিল, এখন বিএনপি প্রার্থীদের নামে বেশি।

৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২১৯ জনের বিরুদ্ধে ৬৭৭টি মামলা চলছে। আওয়ামী লীগের ৩৩ জন, বিএনপির ৯৬ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ৯০ জন মামলার আসামি। ২০১১ সালে ৩২১ জনের (আওয়ামী লীগের ১০২ জন, বিএনপির ১০৯ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ১১০ জন) বিরুদ্ধে মোট ৯৫০টি মামলা ছিল। উভয় নির্বাচনের সময়কার মামলার আসামি ১২১ জন (আওয়ামী লীগের ২০ জন, বিএনপির ৬১ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ৪০ জন)।
 
ইসি’র ওয়েবসাইট ও নাগরিক সংগঠন সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রার্থীদের সম্পর্কে জানা যায় বেশ কিছু মজার তথ্য।
 
বিএনপিতে প্রাধান্য স্বল্পশিক্ষিতের
স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি আসন্ন পৌর নির্বাচনের অধিকাংশ মেয়র প্রার্থী। এসএসসির নিচেই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা।
 
৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২২৪ জন স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেননি, ১২৩ জন পেরেছেন। এইচএসসি শেষ করেছেন ১৯৮ জন, স্নাতক ২১৫ জন, স্নাতকোত্তর ১২৬ জন। বাকি ১৮ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ নেই নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় ।
 
আওয়ামী লীগের ২২১ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪০ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৩০ জন প্রার্থী এসএসসি, ৫৭ জন এইচএসসি, ৬১ জন স্নাতক এবং ২৯ জন স্নাতকোত্তর করেছেন। বাকি ৪ জনের শিক্ষা বিষয়ে হলফনামায় কিছু উল্লেখ নেই।
 
বিএনপির ২০৬ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪০ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি’র নিচে, ২৫ জন প্রার্থী এসএসসি, ৫৩ জন এইচএসসি’র নিচে, ৫৬ জন স্নাতক এবং  ২৭ জন স্নাতকোত্তর করেছেন। বাকি ৫ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলফনামায় উল্লেখ নেই।  
 
এবারও অধিকাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী
 সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো পৌর-নির্বাচনেরও বেশিরভাগ প্রার্থী ব্যবসায়ী।
 
৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬৫২ জন ব্যবসায় জড়িত।   তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ২২১ জনের মধ্যে ১৬৫ জন, বিএনপির ২০৬ জনের মধ্যে ১৬২ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ৪৭৭ জনের মধ্যে ৩১৫ জন মেয়র প্রার্থীই মূলত ব্যবসায়ী।
 
কোটি টাকার ওপরের ঋণগ্রহীতা বিএনপিতে বেশি
৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ১৪৬ জন (আওয়ামী লীগের ৪৮ জন, বিএনপির ৪২ জন স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ৫৫৬ জন)।
 
মোট ১৪৬ জন ঋণগ্রহীতার মধ্যে কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন ১৮ জন, যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫ জন, বিএনপির ৭ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ৬ জন।
 
আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বেশি ঋণ নিলেও কোটি টাকার ওপরে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বিএনপিতে বেশি।
 
আওয়ামী লীগের ঋণগ্রহীতা ৪৮ জন, বিএনপির ৪২ জন। ৫ কোটির উপরে ঋণ নিয়েছে বিএনপির ৪ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন। ১ থেকে ৫ কোটির মধ্যে ঋণগ্রহীতা আওয়ামী লীগের ২ জন, বিএনপির ৩ জন।
 
বছরে কোটি টাকা আয় করেন ৮ প্রার্থী
হলফনামা বলছে, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ৮ জন বছরে কোটি টাকা আয় করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫ জন, বিএনপির ২ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের কোটি টাকা আয়কারী প্রার্থী ১ জন।
 
বিএনপিকে স্বল্প আয়ের প্রার্থীদেরই এ নির্বাচনে বেশি মনোনয়ন দিতে দেখা গেছে। স্বতন্ত্র বা অন্য দলের প্রার্থীদের মধ্যেও স্বল্প আয়কারীর সংখ্যা বেশি।
 
কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক ৪৭ প্রার্থী
 ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪৭ জন কোটিপতি রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২০ জন, বিএনপির ১৩ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ১৪ জন। ২৩ জন প্রার্থী নিজেদের সম্পদের বিবরণ দেননি তাদের হলফনামায়।
 
কর দেন বেশিরভাগ প্রার্থী
বেশিরভাগ প্রার্থীই কর দিচ্ছেন বলে হলফনামায় দেখিয়েছেন। দলগুলোর মধ্যে করতাদার হারও কাছাকাছি। ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর ৭২৯ জনই কর দেন। আওয়ামী লীগের ১৮১ জন, বিএনপির ১৬৯ জন এবং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের করদাতা প্রার্থী ৩৭৯ জন।
 
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার হলফনামা বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলানিউজকে বলেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসির ওয়েবসাইটে চোখ রেখেছি। এখনো অনেক তথ্য সাজানো হয়নি। প্রার্থীদের অনেকেই কিছু কিছু তথ্য জানাননি। অথচ এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব দেখে-শুনেইতো সচেতন নাগরিকরা মেয়র পছন্দ করবেন। এ বিষয়ে ইসিকে আরও যত্নশীল হতে হবে। কারণ, তথ্য জানার অধিকার রয়েছে সবারই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এসকেএস/বিএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।