ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

মাগুরা থেকে আসাদ জামান

‘ভোট আসে, ভোট যায়, জল তো সরে না’

আসাদ জামান ও রূপক আইস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
‘ভোট আসে, ভোট যায়, জল তো সরে না’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাগুরা থেকে: রামপদ কর্মকার। শহরতলীর দরিমাগুরা গ্রামের সর্দারপাড়ার বাসিন্দা।

অন্তজ শ্রেণির প্রতিনিধি হলেও ধনীদের মতোই তিনিও একটি ভোটের মালিক। তাই ভোট এলে প্রার্থিরা আর দশজন ভোটারের মতো রামপদ কর্মকারদের কাছেও আসেন।
 
ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু রামপদ কর্মকারদের দুঃখ যেন দূর হতে চায় না। তাদের দুঃখ জলের দুঃখ, ঘরের দুঃখ, জলাবদ্ধতার দুঃখ।
 
আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত সর্দার পাড়ার (বুনো) সব বাসিন্দার একই অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই তাদের পাড়া ৫ ফুট জলের নিচে ডুবে যায়। বেশিরভাগ সময়ই সেই জল থাকে ৮/১০ দিন পর্যন্ত।
 
প্রতিবারই তারা জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেন এই প্রত্যাশায় যে, এবার যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি তাদের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবেন। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির আশায় ১৯৮৩ সাল থেকেই ভোট দিয়ে আসছেন সর্দারপাড়ার বাসিন্দারা।
 
বুধববার (২৪ ডিসেম্বর) সর্দারপাড়ায় ঢুকেই কথা হয় রামপদ কর্মকারের সঙ্গে। বটিতে শান দিতে ব্যস্ত রামপদ সাংবাদিক দেখেই বলেন, ‘আপনারা ভোটের কথা লিখবেন, কিন্তু আমাদের লাভ কী হবে? ভোট আসে, ভোট চলে যায়, আমাদের জল তো সরে না। ’
 
শুষ্ক মৌসুমেও স্যাঁতস্যাঁতে উঠান মাড়িয়ে একটু ভেতরে ঢুকতেই সামনে এসে দাঁড়ান পঞ্চান্নোর্ধ্ব সুধারাণী। তারও একই কথা, ‘ভোট এলেই আমাদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু ভোট চলে গেলে কেউ আর খবর নিতে আসে না। তারপরও দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিবছরই আমরা ভোট দেই। ’
 
অবশ্য এ পাড়ার বাসিন্দা লিপিরাণী কর্মকার এবার একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে পেয়ে দু’কথা শুনিয়ে দিয়েছেন।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘জনৈক কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট চাইতে এসেছিলেন। তাকে বলে দিয়েছি, জল না সরায়ে ভোট চাইতে এলে, ভোট পাবেন না। ’

সর্দারপাড়া থেকে এবার আমাদের যাত্রা শহরের ডোমপাড়ায়। ভেতরে ঢোকার মুখেই দেখা অনিতা হেলার সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন, আমরা জাতিতে ছোট হতে পারি, কিন্তু আপনাদের মতোই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি। ঘরের ভেতরে গিয়ে আপনারা দেখে আসতে পারেন। কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো কোনো স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে, ভর্তি হতে পারে না। সবাই ভোটের আগে বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ভোট চলে গেলে কেউ আর এ ব্যাপারে কথা বলে না। আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়তে হয় এনজিও’র স্কুলে। ’
 
তারপরও আপনারা ভোট দেন কেন- জানতে চাইলে বলেন, ‘ভোট আমাদের নাগরিক অধিকার। ভোট তো দেবোই। কিন্তু আমাদের ভোটে যারা নির্বাচিত হন, তারা আমাদের জন্য কিছু করতে চান না। কষ্টটা এখানেই। ’
 
অনিতা হেলার সঙ্গে কথা শেষ করে ভেতরে যেতেই দেখা হলো কমল হেলার সঙ্গে। পেশায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হলেও মাগুরা জেলা শহরে গায়ক হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে। ছোট-খাট প্রোগ্রামে গান গাওয়ার ডাক পান প্রায়ই।
 
সাংবাদিক দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন কমল। বলেন, ‘আমাদের পেশা যাই হোক, আমরা কিন্তু সাধারণ মানুষের মতোই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সব সময় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। কেবল ভোট এলে মনে হয়, আমরা সবাই সমান। প্রার্থীরা অন্য পাড়ায় যেমন যান, তেমনি ডোমপাড়াও আসেন। কিন্তু ভোটের পরে তাদের আর খবর থাকে না। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এজেড/আরএম

** ‘তিনি পৌরসভার যোগ্যতা’
** বিদ্রোহে কঠিন নৌকার হিসাব
** সুন্দর বাচনভঙ্গি ও মার্জিত আচরণে ভোট প্রার্থনা!
** জামায়াতের হালুয়া-রুটি টাইট হয়ে গেছে
** মোবাইল-নারকেলে আটকে যেতে পারে নৌকা
** নৌকা-ধানের শীষে গর্বিত প্রার্থী
** বিএনপির বিষফোঁড়া জামায়াত
** ‘যোগ্য লোকের পক্ষ নেব’
** আওয়ামী লীগ ৪, বিএনপি ১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।