‘তবুও কিছুই যেন ভালো যে লাগে না কেন...’। সত্যিই কিছু ভালো লাগছে না ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র ভক্তদের।
১৯৭৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম বাংলা স্বাধীন রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। গৌতম চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জন ঘোষাল, এব্রাহাম মজুমদার, তাপস দাস ও তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়- এই সাতজন সঙ্গীতশিল্পীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সঙ্গীতদলটি।
সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে আধুনিক বাংলা গানের ধরন বদলে দিয়েছিলো তারা। এই দলের সবচেয়ে পুরনো সদস্যদের একজন তাপস দাস। যিনি সবার কাছে বাপী দা নামেই পরিচিতি। তিনি ভালো নেই।
তাপস দাস বাপী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। ৬৮ বছর বয়স প্রবীণ এই শিল্পীর চারটি কেমোথেরাপি নেওয়া হয়েছে আগেই। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে খবর।
জানা গেছে, তাপস দাসের চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসার জন্য অনুদান সংগ্রহও শুরু হয়েছে। তাকে সারিয়ে তুলতে চিকিৎসার জন্য পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ভক্তরা। ইতোমধ্যেই সামাজিকমাধ্যমে অনুদান সংগ্রহের ডাক উঠেছে।
যে উদ্যোগের সামিল হলেন পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী সংগীতশিল্পী অর্ক মুখার্জিও। মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) সামাজিকমাধ্যমে তাপস দাসের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে একটি পোস্ট দেন।
সেখানে অর্ক বলেন, যাদের গান ‘সুদিন কাছে এসো ভালোবাসি একসাথে সবকিছুই’ তাদেরই বাপিদা আজ অসুস্থ। মহিনের ঘোড়াগুলির এই তাপস দাস, বাপিদা কে- তার পরিচয় আমি করিয়ে দেব এত বড় কেউ আমি নই। লাং ক্যান্সার থার্ড স্টেজ, খেতে পারছেন না স্বাভাবিক পদ্ধতিতে।
তাপস দাসের স্ত্রী সুতপার বরাতে অর্ক লেখেন, বাপী দা বেশ কিছু কেমো নিয়েছেন। এখন রেডিয়েশন নেওয়ার মতন অবস্থায় নেই। খেতে পারছেন না স্বাভাবিক ভাবে। ওজন কমে পয়ত্রিশ কিলোয় নেমে এসেছে।
তাপস দাসের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের কথা জানিয়ে অর্ক লেখেন, আমরা বন্ধুরা একটি অনলাইন ফান্ড্রেসার অর্গানাইস করবো দ্রুতোই এক সপ্তাহের মধ্যে। বাজে ভনীতা করে আর পলিটিকাল/এপলিটিকাল কুৎসিত ট্রোলবাজি না করে যদি পারেন আমার আপনার সামান্য ছোট ছোট কান্ট্রিবিউশন পাঠাতে শুরু করুন। খরচ অনেক। ঐ যে গানটা আপনাকে রাতে দিনে ভাবিয়েছে, তারও মূল্য অনেক। সে কথা ভেবে এগিয়ে আসুন।
অর্ক লেখেন, অন্য কে কী করেছে না করেছে তার জন্য না ভেবে যদি সত্যিই কোনোদিন ভেবে থাকেন ‘কোথায় রয়েছে ভাবি লুকিয়ে বিষাদ তবুও’- তবে মনে রাখবেন একটু একটু করে হলেও এই মানুষটিকে বাঁচানোর দায় আমাদেরও আছে।
এদিকে, সদ্য বিদায়ী বছরের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সংগীতমেলায় নাকে রাইলস টিউব লাগানো অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসেই গান গাইতে দেখা যায় তাপস দাসকে। সেই ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে এখন ভাইরাল।
এ প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তাপস দাসের স্ত্রী সুতপা দাস বলেন, এটা হয়ত বাপি বলেই পেরেছে। নাকে রাইনস টিউব নিয়ে গান গাওয়া, মানুষ ভাবতেও পারে না।
‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে বাঁচাতে ভক্তদের পক্ষ থেকে ফান্ড সংগ্রহের বিষয়ে সুতপা দাস বলেন, খুব ভালো লাগছে দেখে, মহীনের ঘোড়াগুলিকে ভালোবেসে, বাপিকে ভালোবেসে সকলে নিজেদের সাধ্যমতো এগিয়ে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রথমদিকে বাপির একটু আপত্তি ছিল। কিন্তু, আমাদের যারা ভালোবাসেন, সংগীতজগতের সবাই বলেছেন- এটা তো ওর (তাপস দাস) প্রাপ্য। বাপি তো কোনোদিন কমার্শিয়ালি গানবাজনা করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এনএটি