দেশীয় শোবিজের জনপ্রিয় অভিনেত্রী, মডেল ও গায়িকা তারিন জাহান। একটি-দুটি নয়, নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর এক শ নাটকে কাজ করেছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
পরিচালক-অভিনয়শিল্পীর এই জুটির বিষয়ে তারিন বলেন, কীভাবে যে সংখ্যাটা ১০০ হয়ে গেছে নিজেও জানতাম না। যখন শুটিংয়ে যাওয়ার পর বৌদি (চয়নিকা চৌধুরী) বলেন- ‘এটা আমাদের শততম সিঙ্গেল নাটক’। এই সংখ্যাটা সিঙ্গেল নাটকের। আমাদের ধারাবাহিক নাটক রয়েছে, টেলিফিল্ম রয়েছে সেগুলো হিসাব ছাড়া। বিষয়টিকে সারপ্রাইজ বলব না, চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা।
একজন পরিচালক-শিল্পীর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেই এমন মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব বলেই মত তারিনের। তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয় পরিচালক-শিল্পীর মধ্যে যখন সুসম্পর্ক, বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ কিংবা কাজের প্রতি বিশ্বাস থাকে।
নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, তার হাতে যখনই কোনো সুন্দর গল্প, চরিত্রের স্ক্রিপ্ট এসেছে সব সময় আমাকে কাস্ট করেছেন। আমার সঙ্গে অনেক গল্প দেখা গেছে শেয়ার করেছেন, কাজ করা হয়নি। বলেছি, বৌদি অন্য কাউকে নিয়ে কাজ করো, আমিও অন্য নির্মাতার কাজ করি। কিন্তু ঘুরেফিরে আমরা কাজ করেছি। আমি মনে করি, ওই বিশ্বাসটুকু ছিল আমাদের মধ্যে এ জন্যই এতোগুলো কাজ একসঙ্গে হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় সার্পোট দর্শকদের। এমন মন্তব্য করে তারিন বলেন, আমার দর্শকরা সাপোর্ট না করলে, ভালোবাসা না দিলে কোনো শিল্পীর পক্ষেই এতো কাজ করা সম্ভব না।
অভিনয়ের বাইরে নাটকে গানও গেয়েছেন তারিন। স্মৃতির হালখাতা থেকে কিছুটা শেয়ার করেন এভাবে- চয়নিকা বৌদির নাটকেও গান গেয়েছি। শুধু তাই নয়, নাটকের টাইটেল গানও গাওয়া হয়েছে। যেটা অরুন চৌধুরীর লেখা, সুর করেছিলেন বাপ্পা মুজমদার। ধারাবাহিকেও আমি গান করেছি। যেখানে সিঙ্গারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। নাটকে আমি আর অপূর্ব ছিলাম। লম্বা জার্নি, অনেকে অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে আমাদের শুটিংয়ের। একটা সময় গিয়ে হয়তো শুধু স্মৃতিচারণ করব।
১৯৮৫ সালে জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিভা অন্বেষণ নতুন কুঁড়িতে অভিনয়, নাচ এবং গল্প বলা প্রতিযােগিতায় প্রথম হন তারিন জাহান। তখন থেকেই তিনি শিশু শিল্পী হিসেবে ছােট পর্দায় কাজ করতে শুরু করেন। তারপর তিনি ১৯৮৮ সালে শহীদুল্লা কায়সারের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক নাটক সংসপ্তকে শিশু চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তৌকির আহমেদের সঙ্গে কাঁঠাল বুড়ি নাটকে, যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রচারিত প্রথম নাটক।
সেই থেকে দিন যত গড়িয়েছে অভিনয়ে আরো দক্ষ, পরিপূর্ণ হয়েছেন এই অভিনয়শিল্পী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সম্পন্ন সবার ভালোবাসা, আর কিছুই নয়।
শুধু শারিরীকভাবে নয়, মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি বলে মনে করেন তারিন। তার মতে, শিল্পী বলে নয়, সব মানুষের সবচেয়ে বড় নেয়ামত সুস্থ থাকা। তার জন্য যতোটুকু সম্ভব নেগেটিভিটি থেকে দূরে থাকা, পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা করা, পজিটিভ কাজ করা। অন্যের ক্ষতি না চেয়ে মঙ্গল চাওয়া, খারাপ বা অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকা, সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করে যাওয়া। আর আমি যে সেক্টরে কাজ করি সেখানে ক্ষুদ্র চেষ্টায় ভালো কাজ করা।
বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী বলেন, গ্লোবাল টিভিতে একটি ডেইলিসোপ চলছে ‘নির্দোষ’। যেটি রোববার থেকে বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে প্রচার হয়। সম্প্রতি কাস্টমস দিবস উপলক্ষে প্রচার হয়েছে ‘স্বর্ণমানব ৫’। এস এ হক অলিকের নির্দেশনায় এই নাটকের মাধ্যমে প্রথমবার কাস্টমস অফিসার চরিত্রে অভিনয় করি। এর আগে ‘সাহসিকা’য় পুলিশের চরিত্র করেছি। এছাড়া মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দীপ্ত প্লেতে ‘সাহসিক টু’ প্রচার হবে।
শিগগরিই একটি সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন তারিন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে একটি সিনেমায় কাজ করবো। সেটি নিয়ে প্রস্তুতি চলছে।
নব্বই দশকের আর বর্তমান সময়ের কাজ নিয়ে তারিনের মন্তব্য, সময় ও মানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তন হয়েছে। আন্তরিকতা, ভালোবাসায় আমাদের কাছে কাজের জায়গা ছিল একটি পরিবার। এখন ব্যস্ততায় ছুটোছুটি বেশি, তাই আন্তরিকতার জায়গাটা হয়তো কম। একদমই নেই বলবো না, আছে কিন্তু সেখানে প্রফেশনালিজম বেড়ে গেছে। আগে আমরা সবারটা নিয়ে চিন্তা করতাম, এখন হয়তো নিজেরটা নিয়ে ভাবি। এটাই পার্থক্য, এছাড়া বিশেষ পার্থক্য আমি দেখি না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
এনএটি