ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

‘জেকে ১৯৭১’র চিত্রনাট্য নিয়ে অভিযোগ, যা বললেন নির্মাতা

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
‘জেকে ১৯৭১’র চিত্রনাট্য নিয়ে অভিযোগ, যা বললেন নির্মাতা ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমার পোস্টার, অমিত মল্লিক ও নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খান

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে সহায়তার জন্য এক ইতিহাস তৈরি করেন ফরাসি যুবক জ্যঁ কুয়ে। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে প্যারিসের আর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) এক বিমান ছিনতাই করেন জ্যঁ কুয়ে।

তার দাবি ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য ২০ টন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী ওই বিমানে তুলে দিতে হবে, তবেই মুক্তি পাবে বিমানের সব যাত্রী।

ঐতিহাসিক এই ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম আন্তর্জাতিক সিনেমা ‘জেকে ১৯৭১’। ফাখরুল আরেফিন খান পরিচালিত এই সিনেমাটি ৩ মার্চ দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।

সিনেমা মুক্তির ৮ দিন পর এর বিরুদ্ধে চিত্রনাট্য ‘চুরি’র অভিযোগ তুলছেন অমিত মল্লিক নামের এক নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী। শনিবার (১১ মার্চ) রাতে সামাজিকমাধ্যমে অমিত মল্লিক তার ফেসবুকে সিনেমার চিত্রনাট্য ও বাংলাদেশ কপিরাইটের সনদসহ ফাকরুল আরেফিন খানকে সিনেমার চিত্রনাট্য ই-মেইলে পাঠানো স্ত্রিনশট শেয়ার করে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

সেখানে অভিযোগ করে তিনি লেখেন, ২০১৫ থেকে ২০১৭, দুই বছরের পরিশ্রম আমাদের টিমের। কিচ্ছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কাউকে ছোট করতেও ইচ্ছে করছে না। সবাই তো চেনা মানুষ। আমরা গিয়েছিলাম অগ্রজ হিসাবে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর বিষয়ে পরামর্শ নিতে। ফলাফল, সিনেমা বানিয়ে রিলিজ অব্দি হয়ে গেলো! ওহ, যারা বোঝেননি, আমি গত ৩ মার্চ রিলিজ হওয়া ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমার কথা বলছি। তবে আমার বানানো নয়। আমার কষ্ট, আমার ভাবনা, আমার ব্রেইন চাইল্ড কেন এভাবে হারাতে হবে?

অমিত মল্লিকের ভাষ্য, ফাখরুল আরেফিন খান অন্তত স্বীকার করতে পারতেন কিংবা বলতে পারতেন, ‘গল্প-চিত্রনাট্য ভালো লেগেছে, আমি বানাই’; সেটাও হতে পারতো। কিন্তু একেবারে অস্বীকার করা, ভুলে যাওয়া দেখেই কষ্ট লেগেছে।

বিষয়টি নিয়ে তিনি জানান, আইনি জায়গা থেকে কিছু করতে চান না তিনি। মূলত কষ্টের জায়গা থেকেই পোস্টটা দিয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে তিনিই প্রথম সিনেমার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যে সিনেমার নাম রাখা হয়েছিল ‘পশ্চিম থেকে পূর্ব’।

এ বিষয়ে নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ই-মেইলে চিত্রনাট্য পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে সেই চিত্রনাট্য নিয়ে পরবর্তীতে না এগিয়ে মাসুম রেজাকে নিয়ে নতুন করে চিত্রনাট্য করা হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা।  

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে একটি পত্রিকায় জ্যঁ কুয়ের গল্পটি প্রকাশের পর তা নিয়ে সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ দেখাই। পরে ভুবন মাঝি সিনেমার কাজে ব্যস্ততার কারণে অন্য কিছু ভাবতে পারিনি। অনেকেই আমাদের কাছে গল্প ও চিত্রনাট্য নিয়ে আসেন। তিনিও ২০১৭ সালের দিকে একবার মনে হয় অফিসে আসছিলেন। উনি আমার পরিচিত নয়। আমার পরিচিত একজনের মাধ্যমে এসেছিলেন। পরে মেইলে চিত্রনাট্য পাঠিয়েছিলেন। ভুবন মাঝির ও গণ্ডি সিনেমার কাজের জন্য তার চিত্রনাট্য আর দেখার সুযোগ পাইনি। পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে আমি সিনেমা বানানোর প্রস্তুতি নেই। কারণ একটি পত্রিকাতে আমি গল্পটি পড়েছিলাম। এই গল্পেই আমরা মাসুম রেজাকে দিয়ে চিত্রনাট্য সাজাই। সেটি নিয়েই সিনেমা নির্মাণ হয়েছে।  

এই নির্মাতা বলেন, আমি কিন্তু উনার চিত্রনাট্য পড়িনি। তবে উনি (অমিত মল্লিক) স্ট্যাটাস দেওয়ার পর জানলাম এই চিত্রনাট্য আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তবে এটা ঠিক এই বিষয়টি নিয়ে সিনেমার কথা হয়তো উনিই প্রথম ভেবেছেন। এটা আমার বলতে দ্বিধা নেই। তবে আমি আজও উনার চিত্রনাট্যটি পড়িনি।

ফাখরুল আরেফিন খান আরো বলেন,  তিনি (অমিত মল্লিক) মেধাবী বলেই এমন একটি চিত্রনাট্য লিখেছেন। তবে আমরা তো লুকিয়ে কোনো কাজ করিনি। সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা, আটিস্ট যুক্ত করা, শুটিং, সেন্সর ছাড়পত্র সবই তো প্রকাশ্যে এনেছি। এগুলো নিয়ে কতশত নিউজও হয়েছে। ওই সময় তিনি বলতে পারতেন, সেন্সরেও অভিযোগ দিতে পারবেন। সেটা না করে সিনেমা মুক্তির পর হঠাৎ কেন অভিযোগ তুলেছে বুঝতে পারছি না। তাকে বলব, আগে সিনেমাটি দেখেন তারপর মিলিয়ে দেখেন তার চিত্রনাট্যের সঙ্গে মিল আছে কি না! আর এটা একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। তাই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে যে কেউ সিনেমা বানাতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চ ভাষণ নিয়ে অনেকেই সিনেমা নির্মাণ করতে পারেন। তাই বলেই এটা নির্মাতার নিজস্ব গল্প হতে পারে না। জ্যুঁ কুয়ের ঘটনাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এটাতো কারো নিজস্ব গল্প নয়। এটা বুঝতে হবে। তবে আমি আবারো বলছি এই বিষয় নিয়ে সিনেমা বানানোর কথা হয়তো উনিই আগে ভেবেছেন। তাই বলে আমি তার চিত্রনাট্য নিয়েছি এটা ঠিক নয়।

উল্লেখ্য,  ‘জেকে ১৯৭১’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার সৌরভ শুভ্র দাশ। এছাড়াও আছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা ফ্রান্সিসকো রেমন্ড, রুশ অভিনেত্রী ডেরিয়া গভ্রুসেনকো, অভিনেতা নিকোলাই নভোমিনাস্কি, পশ্চিমবঙ্গের সব্যসাচী চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল প্রমুখ। ইতোপূর্বে মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ঐতিহাসিক সিনেমার পুরস্কার জিতেছে সিনেমাটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১‌২, ২০২৩
এনএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।