প্রয়াত বরেণ্য চলচ্চিত্রাভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির জন্মদিন শুক্রবার (৩১ মার্চ)। ১৯৬৫ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে রোমান্টিক সিনেমায় দিতির ভুবনভোলানো হাসি দর্শকরা এখনো ভোলেননি। ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে অনেকগুলো রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। টেলিভিশন থেকে সিনেমায় যাওয়া আফজাল হোসেনের সঙ্গেও। তিনি অভিনয় করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা প্রসেনজিতের সঙ্গে।
২০১৫ সালে সর্বশেষ দিতি তার পরিবার এবং চলচ্চিত্রের বেশ কিছু তারকাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন। সে বছরেরই ২৪ জুলাই দিতি অসুস্থ হয়ে ভারতের চেন্নাই যান। কিন্তু চিকিৎসা করালেও পরে তিনি আর সুস্থ হতে পারেননি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ পরপারে পাড়ি জমান দিতি।
গেল ২০ মার্চ ছিল দিতির সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালে ‘শিল্পী সমিতি’র তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সানী, সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসানের উদ্যোগে দিতির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘শিল্পী হৃদয়ে দিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং পরে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দিতিকে নিয়ে আর তেমন কোনো বিশেষ মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
এদিকে শুক্রবার জন্মদিন উপলক্ষে মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন দিতির ছেলে দীপ্ত এবং মেয়ে লামিয়া। দিতি চলে গেছেন সত্যিই। কিন্তু দিতি যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবেন তার ভক্ত-দর্শক, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবসহ চলচ্চিত্র পরিবারের হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
খুব ছোটবেলা থেকেই দিতি গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছোটেবলাতেই তিনি শিশু একাডেমি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হন। যে কারণে নায়িকা হওয়ারও অনেক আগে গায়িকা হওয়ারই ইচ্ছে ছিল তার। বিটিভিতে এক দিন গান গাওয়ার পর চোখে পড়ল আল মনসুরের। তিনি দিতিকে খুঁজে বের করে মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘লাইলী মজনু’ নাটকে কাস্ট করেন। প্রচারের পর দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে এটি।
এরপর নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমের মাধ্যমে দিতি চলচ্চিত্রে নিজেকে পুরোপুরি জড়িয়ে নেন। প্রথম সিনেমা ছিল প্রয়াত পরিচালক উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। এতে তার নায়ক ছিলেন আফজাল হোসেন। কিন্তু সিনেমাটির আশি শতাংশ কাজ হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আর মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা ছিল প্রয়াত পরিচালক আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ‘আমিই ওস্তাদ’।
প্রয়াত পরিচালক সুভাষ দত্ত পরচালিত ‘স্বামী-স্ত্রী’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দিতি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘সুদ আসল’, ‘উসিলা’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘স্বর্গ নরক’, ‘চন্ডিদাস ও রজকিনী’, ‘হীরামতি’, ‘সাহস’, ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’, ‘অমর সঙ্গী’, ‘স্ত্রীর পাওনা’, ‘সাজানো বাগান’, ‘লক্ষীর সংসার’, ‘প্রেমের প্রতিদান’, ‘লুটতরাজ’, ‘অচল পয়সা’, ‘চার সতীনের সংসার’, ‘মেঘের কোলো রোদ’, ‘আকাশ ছোয়া ভালোবাসা’, ‘সেখানে তুমি সেখানে আমি’।
অনুপমের ব্যানারে দিতির গানের প্রথম একক অ্যালবাম ‘তোমার ও চোখে’ বাজারে আসে। এরপর মাঝে দু-একটি চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করলেও আর কোনো অ্যালবাম করা হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালে লেজার ভিশনের ব্যানারে বাজারে আসে দিতির দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ফিরে যেন আসি’। এই অ্যালবামটিও বেশ সফলতা পায়।
ব্যক্তি জীবনে ১৯৮৬ সালে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ভালোবেসে ঘর বাঁধেন দিতি। তাদের সংসারে রয়েছেন কন্যা লামিয়া চৌধুরী ও পুত্র সাফায়েত চৌধুরী দীপ্ত। সোহেলের মৃত্যুর পর ২০০১ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন দিতি। তবে পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
এনএটি