ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

গানে গানে সাংবাদিকতা করি : ফকির আলমগীর

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
গানে গানে সাংবাদিকতা করি : ফকির আলমগীর ফকির আলমগীর/ছবি: রাজিব/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের ৬৫তম জন্মদিন ২১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স সম্পন্ন করার পরও তিনি সাংবাদিকতা করেননি।

বেছে নিলেন গান। তবে তিনি নিজেকে সাংবাদিক মনে করেন। বাংলানিউজের কার্যালয়ে বসে গুণী এই শিল্পী বলেন, ‘আমি গানে গানে সাংবাদিকতা করি। সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে গণসংগীতের মাধ্যমে মানুষের পক্ষে কথা বলছি। ’

১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলায় ভাঙা থানার কালামৃধা গ্রামে ফকির আলমগীরের জন্ম। ১৯৭৬ সালে তিনি গড়ে তোলেন লোকপ্রিয় ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী। এর মাধ্যমে তিনি গণসংগীতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। জনপ্রিয় এই শিল্পীর ৬৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।


গানে গানে জীবনের বেশিরভাগ সময় পেরিয়ে এসেছেন ফকির আলমগীর। তবে সংগীতাঙ্গনে বর্তমানে পচন ধরেছে বলে মন্তব্য তার। এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, বিশ্বায়নের এই যুগে সবকিছুই পুঁজির দাসত্বে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি থেকে শুরু করে সংস্কৃতিও এর বাইরে নয়। সংগীতের নির্যাসটুকু পুঁজি নিয়ে যাচ্ছে। আগে যেমন ভাষা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন সেখানে গণসংগীত বিরাট ভ‚মিকা পালন করেছে। এখনও এ দুঃসময়ে গণসংগীতই পারে রক্তের সঞ্চার ঘটাতে। আমাদের সে সময়ের গানগুলো এখনও মানুষকে উদ্দীপনা যুগিয়ে যায়। ’


স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, মুক্তির গান, প্রবাসী বন্ধুদের গান, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকালীন গানগুলো আজও সবার মনে রয়েছে বলেও জানান ফকির আলমগীর। উদাহরণ হিসেবে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’, ‘পথে এবার নামো সাথী’, ‘ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙ্গাতে’সহ বেশকিছু গানের কথা বললেন। সংগীতকে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যের একটি সোনালি অতীত রয়েছে। সেটা আমাদেরকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে যায়। আগে অলিগলিতে হারমোনিয়ামের গলা সাধের আওয়াজ পেতাম। এখন আর সে সুর পাই না। আমাদেরকে সেই সোনালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সংগীতকে পুঁজির দাসত্বে বিকিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এ দেশের ভালো গানগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। এর মাধ্যমেই গুণী শিল্পীরা নতুন প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকবে। ’


দেশের চলমান অস্থিরতা নিয়েও উদ্বিগ্ন দেখালো ফকির আলমগীরকে। তার মতে, রাজনীতি এখন ছিনতাই হয়ে গেছে! তিনি বলেন, ‘আমরা একটা অস্থির সময় অতিক্রম করছি। গণসংগীত ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা মানববন্ধন করেছি। তবে স্লোগানধর্মী মানববন্ধন করিনি। আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি পারে গোটা দেশে সুবাতাস বয়ে দিতে। প্রখর খরতাপের পর প্রকৃতি থেকে ঠিকই চমৎকার কাক্সিক্ষত বৃষ্টি পাই। আমরাও আশাবাদী, চলমান দুঃসময় বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ’


গানের বাইরে ফকির আলমগীর নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায় রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’ প্রভৃতি। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও এসেছে তার নতুন বই। অনন্যা থেকে প্রকাশ হয়েছে তার লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুরা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজয়ের গান’, ‘নির্বাচিত নিবন্ধন’। এ ছাড়া জিনিয়াস থেকে মেলায় আসবে ‘দেশ দেশান্তর’, ‘স্মৃতি আলাপনে মুক্তিযুদ্ধ’ আর বর্ণপ্রকাশ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হবে ‘প্রামাণ্য ফকির আলমগীর’।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।