ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

ঢাকার মঞ্চে হৃতিকের ডিগবাজি

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
ঢাকার মঞ্চে হৃতিকের ডিগবাজি ঢাকার মঞ্চে হৃতিক রোশন/ছবি: নূর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

২০০০ সালের কথা। ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এই মানুষটা ৩০ হাজার বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন! শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সেই হৃতিক রোশন ঢাকার মঞ্চে।

হাজার হাজার দর্শকের সামনে। এদিন মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন বলিউডের এই সুপারস্টার। তাই তিনি মঞ্চে ওঠেন সবশেষে।

মাতাতে এসেছিলেন, মাতিয়েই গেলেন হৃতিক। তিনি মঞ্চে ওঠেন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। নিজের অভিনীত কয়েকটি ছবির জনপ্রিয় গানের তালে নেচেছেন, মিলিয়েছেন ঠোঁট। তবে পরিবেশনা শেষে ৪১ বছর বয়সী এই তারকার ডিগবাজি ছাড়িয়ে গেলো সব! ঢাকায় এসে তিনি এতোটাই আপ্লুত। নাচানাচি আর মাতামাতি শেষে হৃতিক মাঠ ও গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকদের উদ্দেশ্যে বাংলায় বলেন, ‘কেমন আছেন? ভালো তো?’ এরপর দম ফেলে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর। ধন্যবাদ আমাকে এখানে আনার জন্য। আজকের রাতটা সত্যিকার অর্থে পুরোপুরি জাদুময় মনে হচ্ছে!’

বাংলাদেশে হৃতিকের অগুনতি ভক্ত। উপস্থাপিকা নুসরাত ফারিয়া এটা মনে করিয়ে দিতেই হৃতিক ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারাই আমার শক্তি, অনুপ্রেরণা, ভালোবাসা। আপনাদের এই সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের কথা আমি সবসময়ই মনে রাখি। আমার পাশাপাশি পরিবার আর বন্ধুদেরও ভালোবাসুন। ভালোবাসাই বদলে দিতে পারে জীবন। ’

বিপিএল টি২০ ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট। হৃতিকের ক্রিকেট ভালো লাগে? উপস্থাপিকার এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। আমি ক্রিকেট ভালোবাসি। খেলাধুলা আমার ভালো লাগে। জীবনে খেলাধুলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’

হৃতিককে বলা হয় বলিউডের প্রথম পরিপূর্ণ নায়ক। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশেল থাকা মুখাবয়ব, আকর্ষণীয় শারীরিক কাঠামো, উচ্চারণ, দুর্দান্ত নাচ, প্রেম, মারামারি ও হাস্যরসধর্মী সব ধরনের অভিনয়ে পারদর্শী- কী নেই তার! ভারতে ফিটনেসের জোয়ার এসেছে বিখ্যাত এই তারকার পেশীবহুল শরীর দেখেই। রূপালি পর্দায় কাজ শুরুর আগে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ডুগ্গু (হৃতিকের ডাকনাম)। অভিনয়, গান, নাচ, ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার চালানো শিখেছেন অনেক বছর। উচ্চারণ আর শারীরিক গড়ন যুতসই করতে ঘাম ঝরিয়েছেন অনেক। এখনও করেন কঠোর পরিশ্রম।

নিখুঁত আর যে কোনো পরিস্থিতিকে আয়ত্ত্বে রাখার জন্য প্রচুর অনুশীলন আর প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে হৃতিকের আলাদা সুনাম আছে। ঢাকায়ও সেই প্রমাণ পাওয়া গেলো। মঞ্চ মাতানোর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি হোটেলে না গিয়ে সরাসরি চলে আসেন স্টেডিয়ামে, মহড়া করতে। এরপর যান হোটেলে। রাতে ফের এসেছেন মাঠে। চ্যানেল নাইন পুরো অনুষ্ঠানটি দেখিয়েছে। তাই স্টেডিয়ামের বাইরে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শকরা টিভিতে দেখেছেন হৃতিকের পরিবেশনা।

অভিনেতা-পরিচালক রাকেশ রোশন ছেলের জন্মের পর নাম রেখেছিলেন হৃতিক রাকেশ নাগরাথ। বেড়ে উঠতে উঠতে ৫ ফুট সাড়ে ১১ ইঞ্চি উঁচু হয়েছেন তিনি! কিন্তু ছেলেটা একসময় তোতলামির সমস্যায় ভুগেছে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল লাগোয়া আরেকটি আঙুল আছে। ২১ বছর বয়সে স্কলায়োসিস রোগে ভুগেছিলেন হৃতিক। চিকিৎসক আশঙ্কা নিয়ে বলেছিলেন, হৃতিক কখনও অভিনয় করতে আর নাচতে পারবেন না! সবকিছুকে জয় করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রের খুঁটিনাটি শিখতে গিয়ে বাবার (রাকেশ রোশন) ছবির সেটে মেঝে ঝাড়ু দেওয়া, তারকাদেরকে চা এনে খাওয়ানো থেকে শুরু করে অনেক কাজেই বহু বছর খেটেছেন তিনি। ছবি তুলে স্ক্র্যাপবুক বানিয়ে নিজের দৈনন্দিন জীবনকে দলিল করে রাখতেন অনেক বছর ধরে।

ঢাকায় হৃতিকের পরিবেশনাকে স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরা স্মৃতি হিসেবে বহুদিন রেখে দেবেন নিশ্চয়ই! শুরুতে সহ-নৃত্যশিল্পীরা মঞ্চে নাচতে শুরু করেন। তাদের সারা শরীরে আলো ঝিকমিক করছে। মাথা আর পায়ের আলোর রঙ সবুজ। আঁধার মঞ্চে তখন মনে হচ্ছিলো এ যেন আলোর নাচন! তারা সরে যেতেই দেখা গেলো হৃতিকের মুখ। যার জন্য বিশ্বজুড়ে মেয়েরা ফিদা! তিনি মঞ্চে হেঁটে আসছেন, তার পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে স্টেডিয়াম জুড়ে।

গত বছর হলিউডের ‘নাইট অ্যান্ড ডে’ ছবির রিমেকে অভিনয় করেন হৃতিক। শুরুতে ওই ছবির শিরোনাম গান ‘ব্যাং ব্যাং’-এর তালে নেচেছেন তিনি। এরপর মনে করিয়ে দিলেন পনেরো বছর আগের কথা। ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ ছবির তুমুল জনপ্রিয় গান ‘এক পাল কা জিনা’র তালে সেই চেনা হৃতিককে পাওয়া গেলো।

এরপর আবার ফিরে এলেন ‘ব্যাং ব্যাং’-এ। এবার নাচলেন এ ছবির ‘তু মেরি’ গানের সঙ্গে। সবশেষে যে ছবিতে খলনায়ক হয়েছিলেন, সেই ‘ধুম টু’র (২০০৬) ‘ধুম মাচালে’ গানে বুঝিয়ে দিলেন তার সব পরিবেশনাই ধুমধাড়াক্কা! ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ (২০০১), ‘কোই মিল গ্যায়া’ (২০০৩), ‘লক্ষ্য’ (২০০৪), ‘কৃষ’ (২০০৬), ‘যোধা আকবর’ (২০০৮), ‘কাইটস’ (২০১০), ‘গুজারিশ’ (২০১০), ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ (২০১১), ‘অগ্নিপথ’ (২০১২), ‘কৃষ থ্রি’ (২০১৩) ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় সে প্রমাণ দিয়ে এসেছেন তিনি।    

ঢাকায় এটাই ছিলো হৃতিকের প্রথম সফর। তাই মঞ্চে ওঠার আগে উপস্থাপিকা পামেলা সিং ভুটোরিয়াকে তিনি এর অনুভূতি জানান, প্রশংসা করেন এখানকার খাবারের। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। আমি অভিভূত। এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আগের জন্মে মনে হয় কোনো পুণ্য করেছিলাম! তাই মানুষের এমন ভালোবাসা পাই। ভক্তরাই আমার সাহস, প্রেরণা, সব। ’

বাংলাদেশ সময় : ০০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।