ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

কে সেতার বাজায় রে!

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
কে সেতার বাজায় রে! আলিফ লায়লা/ ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তার লম্বা-সরু আঙুল যখন ছুঁয়ে দেয় সেতারের চিকারী-তড়ফের তার, মুর্ছনা ছুটে যায় কোথায় কোথায়! সুর ছুটে যায়। আর? কিছু রঙ।

দৃশ্যপট এঁকে দেয় চোখের সামনে। দৃশ্যজোড়া একটা নদী রাগ ভৈরবীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে বয়ে চলে। তীরে-মোহনায় কুয়াশা জমে শীতে। পাতা ঝরে যায় দু’তীরের ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত বনাঞ্চলের। আবার বসন্তও আসে মুহূর্তেই। লোকালয় জেগে ওঠে সবুজের সুসংবাদ নিয়ে।

এই দৃশ্যগুলো যে তৈরি হচ্ছে, ২০ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় শহর ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি)’র অডিটোরিয়ামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেয়াল ছেড়ে তার সেতারের সুর ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে লোকালয়ে-প্রান্তরে-নদী-মাঠে; সেটা কি আলিফ লায়লা নিজে টের পান? প্রসঙ্গটি দোল খেতে পারতো আরও বহুক্ষণ, বহুদিনও হয়তোবা, তার মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আলিফ লায়লা টের পান, বুঝতে পারেন বলেই সেতারে আঙুল ছোঁয়ানোর একফাঁকে গুঁজে দেন, ‘...এখানে বসে মনে হচ্ছে, শীত শেষ হয়ে গেছে। বসন্ত আসছে। ফুল ফুটছে। ’ এমনভাবে বলেন, মনে হয়, কেউ একজন যেন চোখের সামনে ক্যানভাস ঝুলিয়ে, রঙ-তুলিতে জলরঙে খসখস করে দৃশ্যগুলো এঁকে দিলো দ্রুত!

সুরের সঙ্গে আলিফ লায়লার বসবাস যেমন, সেতারের সঙ্গে; চিত্রও তার পিছু পিছু আপন হয়ে ছুটেছে সব সময়। বলে রাখা ভালো, আলিফ কলার পূজারি- তা সে চিত্রকলা হোক, সংগীত অথবা সাহিত্য। আশির দশকের গোড়ার দিকে তিনি চারুকলায় গ্রাজুয়েশন করেছেন। ওয়াটার কালার পেইন্টিংয়ে পুরস্কারও পেয়েছেন বহুবার। সেই তিনি সেতার হাতে তোলেন যখন, পরিচয় করিয়ে দেন- রাগ যোগ, ভৈরবী, কেরওয়ানির সঙ্গে; ইমেজও ভীষণ আনুষঙ্গিক হয়ে ওঠে। ঠিক কবে কীভাবে তুলির পাশাপাশি সেতার উঠে এলো তার হাতে? আলিফ লায়লা শুধু জানান, ‘মা আমার হাতে তুলে দিয়েছে এই যন্ত্রটি। তিনি শিখতে চেয়েছিলেন ছোটবেলায়। তবে তার যুগে একজন মহিলার, একজন মেয়ের কোনো বাদ্যযন্ত্র একজন পুরুষ টিচারের কাছে শেখা সম্ভব ছিলো না বলে তিনি চেয়েছেন যে, আমি এটা শিখি। সেভাবেই এসেছে আমার জীবনে। ’

আলিফ লায়লা ক’দিনের জন্য এসেছেন বাংলাদেশে, নিজের দেশে। ১৯৮৮’র আগ পর্যন্ত এখানেই ছিলেন এই সেতার মায়েস্ত্রো। তারপর থেকে প্রবাস যাপন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। তবে সে কথা থাক। কথা হোক ২০ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা নিয়ে। ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) ডেকেছিলো তাকে। তার সেতার শুনতে, কিছু কথা, সঙ্গে রূপক ভট্টাচার্যের তবলা-সঙ্গত। করেছিলো জমকালো আয়োজন।

আলিফ লায়লা ধীর পায়ে সিঁড়ি ভেঙে, মঞ্চে উঠে, জুতোজোড়া খুলে রাখলেন পাশে। দু’হাতের আঙুল টানটান ছড়িয়ে দিয়ে-মিলিয়ে দিয়ে পরস্পরে, মাথা ঝুঁকিয়ে কেমন গলে গেলেন বিনয়ে! তারপর যেমনটা বলেছিলেন, ‘মিউজিক হচ্ছে আলাপচারিতা, এনার্জির বিনিময়’- তার পুরো পরিবেশনায় সেটাই প্রমাণিত হলো বারবার। কী মধুর আলাপে মগ্ন হলো আলিফ লায়লার সেতার আর রূপক ভট্টাচার্যের তবলা!

সমঝদার দর্শক-শ্রোতায় ভরা ছিলো গ্যালারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একেকটি পরিবেশনার পর তাদের হাততালিতে অভিনন্দিত করছিলেন শিল্পীদের। মুগ্ধতার কথা জানালেন আইইউবি’র বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির চেয়ারম্যান রাশেদ চৌধুরী। শিল্পীদের হাতে উপহার আর সম্মাননা তুলে দিয়ে তিনি জানালেন, এমন শিল্পীদের ডেকে বারবার এ ধরনের আয়োজন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
কেবিএন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।