ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

অঞ্জু ঘোষ দেখা দিলেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
অঞ্জু ঘোষ দেখা দিলেন অঞ্জু ঘোষ (ছবি: সংগৃহীত)

‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত চিত্রনায়িকা অঞ্জু ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে পর্দার আঁড়ালে। জনসমক্ষে তাকে পাওয়া যায় না। মাঝে-মধ্যে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে পরবাসী এই শিল্পীর নাম।

অঞ্জু ভারতের কলকাতায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন— এমন খবরটি সত্যি নয়। এসব খবরের অধিকাংশই থাকে কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর ‍দৃষ্টির অগোচরে।

তবে কিছু কিছু খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অঞ্জু ঘোষ। ১ মার্চ কলকাতায় সল্টলেক রোডের বাসায় অঞ্জু ঘোষ দেখা দিলেন নির্মাতা সাইদুর রহমান সাইদকে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক পলাশ।

শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘অঞ্জু ম্যাডামের সল্টলেক রোডের বাসাটা খুব সুন্দর আর পরিপাটি। দেখে মনে হলো না যে, তিনি কষ্টে আছেন। তিনি ভালো আছেন। সাইদ স্যারকে পেয়ে ম্যাডাম যেন পুরো বাংলাদেশকে কাছে পেয়েছিলেন! এমনই আতিথেয়তা দেখেছি তার। ’

অঞ্জু ঘোষের কলকাতার বাসায় চিত্রনায়ক পলাশ, অঞ্জু ঘোষ ও সাইদুর রহমান সাইদ (ছবি সংগৃহীত)পলাশ জানান, জন্মভূমির জন্য প্রায়ই মন খারাপ করেন অঞ্জু ঘোষ। অভিমান করে দেশ ছেড়েছিলেন। সেই অভিমান নিয়েই নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছেন। এ ছাড়া তার আর কোনো আক্ষেপ নেই। তবে চলচ্চিত্রের সোনালি দিনগুলির কথা মনে পড়ে তার। তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনাও করেছেন অঞ্জু। পলাশ জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ হোক, এমনটাও চান না আলোচিত এই অভিনেত্রী। খুব ঘনিষ্ঠজন না হলে কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না অঞ্জু ঘোষ।

কী কারণে দেশ বা চলচ্চিত্র ছেড়েছিলেন অঞ্জ ঘোষ? স্বল্প সময়ে ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা দেখে অনেকেই নাকি তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। ফিল্মি পলেটিক্সের শিকার হয়েছিলেন। এক সময় বাধ্য হয়ে কলকাতায় চলে যান— এমনটাই জানিয়েছেন অঞ্জু। ১৯৯৬ সালে কলকাতায় পাড়ি জমানোর পর সেখানকার মঞ্চ ও ছবিতে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও ‘বাংলাদেশের শিল্পী’ বলে বাঁকা চোখে দেখা হতো তাকে। এরপরও হাল ছাড়েননি। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন?

ছবি: সংগৃহীতকলকাতায় প্রায় দু’ডজন ছবিতে কাজ করেন অঞ্জু। ২০০৮ সাল পর্যন্ত যাত্রাপালায় তার ব্যাপক চাহিদা ছিলো। ২০০৪ সালের পর থেকে কলকাতার ছবিতেও চাহিদা কমলে যাত্রামঞ্চেই নিয়মিত হন তিনি। এর মধ্যে ২০০২ সালে ফের বিয়ে করেন যাত্রাশিল্পী সঞ্জীবকে। ২০০৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

শোনা যায়, এর আগে ১৯৮৫ সালে তার প্রেমিক চিত্রনায়ক অন্যত্র বিয়ে করলে ভেঙে পড়েন অঞ্জু। ওই বছরেই জেদের বশে বিয়ে করেন চিত্রপরিচালক এফ কবির চৌধুরীকে। সে বিয়ে টিকেছিলো মাত্র চার মাস।

১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ মুক্তি পেয়ে ব্যবসাসফল হলে আবার আশার আলো দেখতে থাকেন তিনি। মাত্র কয়েকটি ছবি ব্যবসা করলেও আগের মতো ক্রেজ ছিলো না তার। প্রেমঘটিত স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে তার ফিল্মি ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সাইদুর রহমান সাইদ অঞ্জুকে নিয়ে ৬-৭টি ছবি তৈরি করেন। ১৯৯৫ সালে ‘নেশা’ ছবি নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু কাজ অসমাপ্ত রেখেই পরের বছর কলকাতা চলে যান অঞ্জু। এরপর হাতেগোনা মাত্র কয়েকবার দেশে আসেন তিনি। আসা-যাওয়ার ওই সময়টাতে তিনি সাইদের বাসাতেই থাকতেন। এই নির্মাতার স্ত্রীর সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

ছবি: সংগৃহীতনায়িকা অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি ঘোষ। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার জন্ম। স্বাধীনতার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গাইতেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে অভিনয় করেন। তখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম হলে নিয়মিত নাটক করতেন তিনি। ‘দুবাইওয়ালা’, ‘রিকশাওয়ালা’, ‘সাতভাই চম্পা’, ‘রূপবান’সহ প্রচুর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মঞ্চায়িত নাটকে অভিনয় করেন ও একশ্রেণির দর্শকের কাছে রীতিমতো ক্রেজে পরিনত হন তিনি। তার সঙ্গে এসব নাটকে জুটি বেঁধে অভিনয় করতেন চট্টগ্রামের জনপ্রিয় অভিনেতা পংকজ বৈদ্য। যিনি পরবর্তীতে সুজন নামে ‘উজান-ভাটি’সহ বেশ ক’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো অঞ্জু-পংকজ বৈদ্য জুটির।

১৯৮২ সালে নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী চলচ্চিত্রে আনেন তাকে। নির্মাণ করেন ‘সওদাগর’ শিরোনামের একটি ছবি। বেশ খোলামেলা হয়ে ওই ছবিতে অভিনয়ের কারণে একশ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অঞ্জু ঘোষ। এরপর এই নির্মাতার আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে এ ধরনের অভিনয় করে সমালোচিত হন। ঢালিউডে প্রায় অর্ধশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। এর মধ্যে আছে ‘নরম গরম’, ‘আবে হায়াত’, ‘রাজ সিংহাসন’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘সোনাই বন্ধু’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘বড় ভালো লোক ছিলো’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘আশা নিরাশা’, ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’, ‘মালা বদল’, ‘আশীর্বাদ’ প্রভৃতি।

ছবি: সংগৃহীতকলকাতায় সাইদুর রহমান সাইদ ও পলাশের সঙ্গে আড্ডায় অঞ্জু জানিয়েছেন, এখনও ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু মন সায় দেয় না। চলচ্চিত্রে ফিরবেন কি-না জানেন না।  অঞ্জু মনে করেন, বাংলাদেশি ছবির জন্য আরও কিছু করতে চেয়েছিলেন তিনি। অঞ্জু বিশ্বাস করেন, এই সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এসও   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।