ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

হুমায়ুন ফরিদীর রক্তে মিশে ছিলো অভিনয়

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
হুমায়ুন ফরিদীর রক্তে মিশে ছিলো অভিনয় হুমায়ুন ফরিদী

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর ৬৬তম জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেওয়া ফরিদী মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তুমুল খ্যাতি অর্জন করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফরিদী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে আসন গেড়ে নেন।

১৯৬৪ সালে মাত্র ‪‎১২‬‬‬‬ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জের মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ প্রথম অভিনয়ে করেন হুমায়ুন ফরিদী।

১৯৭৬ সালে নাট্যজন “সেলিম আল দীন”-এর উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব। ফরিদী ছিলেন এর অন্যতম প্রধান সংগঠক। এই উৎসবে ফরিদীর নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। ওই সময় নাটকটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।

হুমায়ুন ফরিদীঢাকা থিয়েটার এ ‎শকুন্তলা‬‬‬‬, ফণীমনসা, কীত্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, মুনতাসীর ফ্যান্টাসি, ভূতের মতো তুমুল জনপ্রিয় মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ফরিদী হয়ে উঠেন ঢাকা থিয়েটারের প্রাণ ভোমরা। বনে যান সেসময়ের মঞ্চ নাটকের অদ্বিতীয় ব্যক্তি। নাট্যপাড়ায় হুমায়ূন তখন শক্তিমানদের একজন।

আতিকুল ইসলাম চৌধুরীর ‘নিখোঁজ সংবাদ’র মধ্য দিয়ে টিভি পর্দায় আগমন। তবে ১৯৮৩ সালে সেলিম আল দীনের রচনা এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় সেই সময়কার জনপ্রিয় নাটক ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’তে টুপি দাড়িওয়ালা গ্রামের মিচকা শয়তান সেরাজ তালুকদারের যে চারিত্রিক রুপ তিনি দিয়েছিলেন আর সেই নাটকে তার সেই সংলাপ ‘আরে আমি তো পানি কিনি, পানি, দুধ দিয়া খাইবা না খালি খাইবা বাজান’ বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো।

এরপর একে একে করেছেন হঠাৎ একদিন, দূরবীণ দিয়ে দেখুন, কোথায় কেউ নেই, বকুলপুর কতো দূর, ভবের হাট, এরকম আরো অসংখ্য অগনিত তুমুল দর্শকপ্রিয় টিভি নাটক।

বাঙালির মধ্যবিত্ত সামাজিক জীবনধারাকে তিনি আনন্দিত করে তুলেছিলেন, ফরিদীর নাটক মানেই বিটিভির সাদাকালো পর্দায় পুরো বাঙালির চোখ আটকে যাওয়া। হতাশ করতেন না তিনি,, এতো প্রানবন্ত, এতো জীবন্ত, যেনো আমাদের চারপাশের মানুষগুলোই জীবন্ত হয়ে যেতো ফরিদীর অভিনয়ে!!

আর “সংশপ্তক” নাটকে হুমায়ূনের ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রের অভিনয় যারা দেখেছেন তারা ফরিদীকে স্থান দিয়েছেন হৃদয়ের একেবারে মাঝখানে।

নব্বই দশকে এসে নাম লিখিয়েছিলেন ‘বানিজ্যিক ধারার বাংলা ছবিতে। ‘হুলিয়া ‘ দিয়ে প্রথম সিনেমাতে অভিনয়। ফরিদী অভিনয়ে এতোটাই অনবদ্য ছিলেন যে একসময় নায়কের চেয়ে বাংলা সিনেমাপ্রেমী জাতির কাছে ভিলেন হুমায়ূন ফরিদী বেশি প্রিয় হয়ে ওঠেন।

একটু একটু করে বাংলা সিনেমায় ভিলেনের সংজ্ঞাটাও যেনো পরিবর্তন হতে থাকে। দহন, আনন্দ অশ্রু, বিচার হবে, মায়ের অধিকার, একাত্তরের যীশু, ভণ্ড, পালাবি কোথায়, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া, হিংসা, বিশ্ব প্রেমিক, অপহরণের মতো জনপ্রিয় এবং একই সঙ্গে বানিজ্যিকভাবে সফল ২৫০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।

হুমায়ুন ফরিদীহুমায়ুন ফরিদীর রক্তে মিশে ছিলো অভিনয়, নাট্য জগতের সবাই বুঝে ফেলেছিল ধূমকেতুর জন্ম হয়েছে, একদিন শাসন করবে এই যুবক। সেদিনের হিসেব এক চিলতেও ভুল হয়নি, এরপর টানা তিন দশক তার ক্যারিশম্যাটিক, তার ম্যাজিকাল অভিনয়ে বুঁদ করে রেখেছিলেন পুরো বাঙালি অভিনয় প্রিয় জাতিকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।