ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

ইতিহাসের সেরা পঞ্চাশ নাটকের একটি ‘জ্যোতিসংহিতা’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
ইতিহাসের সেরা পঞ্চাশ নাটকের একটি ‘জ্যোতিসংহিতা’

হবিগঞ্জ: ইতিহাসে লুকায়িত ভাটি অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতি দাস ও তার দাসপার্র্টির যুদ্ধগাথা। অসীম সাহসী এই যোদ্ধাকে খোঁজে আনার প্রয়াস ছিল ‘জ্যোতিসংহিতা’ নাটকে।

নাটকটিতে ছিল সমকালীন প্রজন্মকে আত্মানুসন্ধান আর আত্মপরিচয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রয়াসও।

নাট্যকার রুমা মোদকের লেখা হবিগঞ্জ জীবন সংকেত নাট্যগোষ্ঠীর ‘জ্যোতিসংহিতা’ নাটকটি বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে নির্মিত সেরা পঞ্চাশটি নাটকের একটি নির্বাচিত হয়েছে। থিয়েটারভিত্তিক দেশের খ্যাতনামা সাময়িকী ‘থিয়েটারওয়ালা’র ৩৩তম সংখ্যায় তারা পঞ্চাশটি নাটক নির্বাচিত করলে সেখানে স্থান পেয়েছে ‘জ্যোতিসংহিতা’ও।

‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা; প্রসঙ্গ: জ্যোতিসংহিতা’- শিরোনামে এ সংখ্যায় নাট্যশিক্ষক আতিকুল ইসলামের জ্যোতিসংহিতার নাট্যসমালোচনায় ‘ভাটির বীর জগৎজ্যোতি দাসের জলছবি’ শিরোনামে থিয়েটারওলায় পুনঃপ্রকাশ হয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় নাটকটি ২০১২ সালে মঞ্চে আনে জীবন সংকেত। ভাটি বাংলার বীরযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস ও তার দাসপার্টিকে নিয়ে রুমা মোদকের লেখা নাটক ‘জ্যোতিসংহিতা’র শিরোনাম ছিল- ‘তারুণ্যের অন্তহীন যাত্রা’। সুদীপ চক্রবর্তী নির্দেশিত এ নাটকটি বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপকভাবে দর্শকনন্দিত হয়।

ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার নাট্য সমালোচক অংশুমান ভৌমিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের বয়স ৫০ হলো বলে ১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে তৈরি হওয়া সেরা মঞ্চনাটকের একটা আশ্চর্য ফর্দ বানিয়েছে থিয়েটারওয়ালা। সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার বা সম্পাদকমণ্ডলী নিজেরাই সেরার সেরা বাছাই করেছেন? একেবারেই না।  

তারা এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেশের ১০০ জন নাট্যকার-নাট্যভাবুককে। তারা প্রত্যেকে পছন্দসই নাটকের যে তালিকা পাঠিয়েছিলেন সেই সব তালিকা যাচাই করে যেসব নাটক বেশিবার বাছাই করা হয়েছে; সেসব নাটক ঠাঁই পেয়েছে সেরার ফর্দে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের অভিযাত্রাকে উদযাপন করার এমন উদ্যোগকে শাবাশি না দিয়ে পারবেন না কেউ।  

আতিকুল ইসলাম তার নাট্যসমালোচনায় লিখেছেন, ‘তারুণ্যের অন্তহীন যাত্রা’ আহ্বান নিয়ে প্রযোজনাটি মূলত গবেষণাধর্মী ও নিরীক্ষার ছায়ায় বর্ণনাত্মক ধারার নাট্য-উপস্থাপনা। রুমা মোদকের এই নাটক কেবলই সরল নাট্যরচনা নয়, কেবলই একটি শিল্পপ্রয়াসে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং হয়ে উঠেছে এক অনিবার্য অনুসন্ধানী দর্পণ।  

সুদীপ চক্রবর্তী নাটকটির নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় এনেছেন অভিনবত্বের বহুমাত্রা। যুদ্ধগাথা উপস্থাপনে বন্দুক, কামান বা এলএমজির প্রচলিত উপকরণের পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন প্রতীকী উপকরণ। যে উপকরণ তিনি গ্রহণ করেছেন, তা ভাটি বাংলার যাপিত-জীবনের সঙ্গে আবশ্যিক অনুসঙ্গ হয়ে মিশে আছে নিত্য। প্রায়োগিক-অভিনবত্বে মাছ ধরার জাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তানি বধের অন্যতম হাতিয়ার, পলো বা বাঁশের লাঠি হয়ে উঠেছে রাজাকার-দমনের দুর্নিবার এলএমজি। এ যেন এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। অদম্য তরুণ যোদ্ধাদের যুদ্ধগাথা পরিবেশনে এসব উপকরণের সার্থক প্রয়োগ দর্শককে মুখোমুখি করে মুগ্ধ বিস্ময়ের।

দৃষ্টিনন্দন ও অনন্য শৈল্পিকতাময় নাট্য প্রযোজনাটি মঞ্চে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ‘জীবন সংকেতে’র একঝাঁক তরুণ উদ্যমীশিল্পীর শ্রমে আর মেধায়। অপূর্ব তাদের যূথবদ্ধ কর্মযজ্ঞ। অনবদ্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর একুশ শতকের একদল নাট্যতরুণ এবং মুক্তিযুদ্ধকালের একদল জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে-পড়া তরুণ-যোদ্ধার অদম্য যুদ্ধগাথা যেন একাকার হয়ে যায় পরিবেশনায়।  
জগৎজ্যোতির তারুণ্যের গৌরবগাথা যেন মঞ্চালোকে গেয়ে যায় কালে কালে সব তারুণ্যের জয়গাথা, আর এই বিশ্বাসে স্থিত করে যে, সর্বকালেই তারুণ্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।