ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

শুভ জন্মদিন সম্প্রীতির বার্তাবাহক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

তাপস হালদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
শুভ জন্মদিন সম্প্রীতির বার্তাবাহক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

মহান ব্যক্তিদের অনেক কর্ম থাকে তার মধ্যে দু-একটি কর্ম হয়তো তাকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখে। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ও দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন।

কিন্তু আমি মনে করি, ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন। চলচ্চিত্রটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের কাহিনী সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি হতে পারে ইতিহাসের একটি দলিল। বাঙালি জাতির হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করা বিরল এক সৌভাগ্যের ব্যাপার। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।  

উপমহাদেশের বরেণ্য সাংবাদিক, একুশে গানের রচয়িতা, ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ চলচ্চিত্রের পরিচালক আবদুল গাফফার চৌধুরী এটি তৈরির প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে মাঝে মাঝেই একটি কথা বলেন, ‘চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করার জন্য অনেককেই অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে কেউ-ই রাজি হচ্ছিল না, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সাহসটি দেখিয়েছিল। ’

চলচ্চিত্রটি যখন তৈরি করা হয় তখন দেশের প্রেক্ষাপট খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তাণ্ডবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লোকদের কথা বলাটাই দায় হয়ে পড়েছিল। সে সময় এই ধরনের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা মোটেও সহজ সাধ্য ছিল না। এই চলচ্চিত্রের জন্য পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লন্ডন, নিউইয়র্ক, ঢাকায় একাধিকবার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে এজন্য দেশ-বিদেশে পালিয়েও থাকতে হয়েছিল।

মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার, লেখক, গবেষকসহ এমন বহু পরিচয় থাকলেও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বনামেই খ্যাত। আলাদা করে তার পরিচয় দিতে হয় না। এদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রগতিশীল প্রতিটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরির ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।  

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ বহু সংগঠনের তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন।

ছাত্র জীবনেই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ’৬২-র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন ও ৬৬-র ৬ দফা আন্দোলনে স্কুলের ছাত্র হয়েও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তো ছাত্রনেতা হিসেবে রাজেন্দ্র কলেজসহ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।  

মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের পতন আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে গড়ে ওঠা যুব ঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও যুব সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ কামালের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে। সেই বন্ধুত্ব শেখ কামাল শহীদ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বলবৎ ছিল। শেখ কামালের সঙ্গে বন্ধুত্বকে তিনি আজও ভুলতে পারেননি। সেজন্যই শেখ কামালের কর্ম জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তার (শেখ কামাল) জন্মদিনে বন্ধুদের নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান করে থাকেন। শেখ কামালের কর্ম ও আদর্শকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

এক সময় বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার নামেই নাটক দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়তো দর্শক-শ্রোতারা। আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘সকাল সন্ধ্যা’ নাটকে ‘শাহেদ’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। প্রথম অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আগামী’।  

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের যীশু’তে পাদ্রীর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘গেরিলা’য় অভিনয় করেও প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘মহামিলন’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘কীর্তন খোলা’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘আঁধিয়ার’, ‘আমার আছে জল’, ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘বুনো হাঁস’ ইত্যাদি।  

বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রে প্রধান অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সকল শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে একটি আলাদা স্থান করে নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। শুরু থেকেই অনন্য কাজের পাশাপাশি গণমাধ্যমেও যুক্ত ছিলেন। নব্বই দশকের শুরুতে দৈনিক লাল সবুজ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট চ্যানেল একুশে টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

আশির দশক থেকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে নিয়মিত মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে লিখে যাচ্ছেন। এছাড়া মৌলিক সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও ছড়ার অসংখ্য গ্রন্থ লিখে বাংলা সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধ।

বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বাধীনতার সপক্ষের সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি পেশার গুণীজনদের নিয়ে তিনি তৈরি করছেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র সংগঠন যেখানে সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশার প্রতিনিধি আছেন। তিনি নিজে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেন বলেই সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের কাছে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতেই সম্প্রীতি বাংলাদেশ সংগঠনটি গঠন করেছেন। সম্প্রীতির বার্তাবাহক হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার দর্শনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
 
১৯৫০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, লোকসংস্কৃতির লীলাক্ষেত্র ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এই বরেণ্য ব্যক্তির ৭১তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সদস্য সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।
ইমেইল:haldertapas80@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।