ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

জামিন পেলেন শাহরুখপুত্র আরিয়ান 

বিনোদন ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
জামিন পেলেন শাহরুখপুত্র আরিয়ান 

দীর্ঘ ২৬ দিন পর মাদককাণ্ডে জামিন পেলেন শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খান। তৃতীয় দফার শুনানির দিন মুম্বাই হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করলেন আরিয়ান খান এবং তার বন্ধু আরবাজ মার্চেন্ট এবং মুনমুন ধামেচার।

 

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার পর উচ্চ আদালতে আরিয়ানের মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)র পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এএসজি অনিল সিং। আরিয়ানের আইনজীবী ছিলেন ভারতের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল (এজিআই) মুকুল রোহাতজি।

তবে জামিন মঞ্জুর হলেও এদিন বিস্তারিত রায় দেয়নি আদালত। তাই বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) জেল থেকে ছাড়া পাবে না আরিয়ানরা। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) জামিন মঞ্জুরের বিস্তারিত কারণ জানানোর পরেই মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেল থেকে ছাড়া পাবেন আরিয়ান।

আরিয়ানের আইনজীবী মুকুল রোহাতজি বলেছেন, আশা করা হচ্ছে, শুক্রবার অথবা শনিবার কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন তারা।

এর আগে টানা তিন বার বিশেষ এনডিপিএস আদালতে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়েছেন এ তারকা-সন্তান।

মুম্বাইয়ের উপকূলে একটি প্রমোদতরীতে চলমান মাদক পার্টি থেকে ২ অক্টোবর রাতে আরিয়ান খানসহ মোট আট জনকে আটক করে (এনসিবি) এনসিবি। এরপর দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা জেরার পর ৩ অক্টোবর বিকেলে আরিয়ান খানকে গ্রেফতার দেখায় এনসিবি।

গ্রেফতারের পর আরিয়ানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এনডিপিএসের ৮সি, ২০বি, ২৭, ২৯ ও ৩৫ ধারায় মামলা করা হয়।   

এ ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী খান। কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা থাকলেও ছেলে গ্রেফতারের খবরে তা স্থগিত করেন তিনি। অন্যদিকে, ‘পাঠান’ সিনেমার জন্য স্পেনে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করেছেন শাহরুখ খান।

গ্রেফতারের দিনেই (৩ অক্টোবর) ছেলের মুক্তির জন্য শাহরুখ যোগাযোগ করেন ভারতের বিখ্যাত আইনজীবী সতীশ মানশিণ্ডের সঙ্গে। ওই দিনই সতীশের প্রতিনিধিরা এনসিবির দপ্তরেও যান।

আরিয়ানকে গ্রেফতার বিষয়টি জানতে পেরে (০৩ অক্টোবর) মধ্য রাতেই মুম্বাইয়ে শাহরুখের বাড়ি মান্নাতে ছুটে যান আরেক সুপারস্টার সালমান খান। শাহরুখের বাংলোর বাইরে জড়ো হওয়া সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাবন্দি হন তিনি। তখন বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল সালমানকে, বন্ধুপুত্রের গ্রেফতারিতে তিনিও বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন।

৪ অক্টোবর বিকেলে আরিয়ান খানকে মুম্বাইয়ের এসপ্ল্যানেড আদালতে হাজির করে এনসিবি। এরপর দুই বন্ধুসহ তাকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে রাখার জন্য আবেদন করে সংস্থাটি। একইসঙ্গে আরিয়ানের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। তবে জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে আরও ৩ দিনের জন্য এনসিবির হেফাজতে পাঠায় আদালত।

হেফাজতে শাহরুখের ছেলে হিসেবে বিশেষ কোনো সুবিধা পাননি আরিয়ান। এনসিবির মেসে তৈরি খাবার খেতে হয়েছে তাকে। তবে সংস্থাটির জেলে থাকা অবস্থায় পড়ার জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বই দেওয়া হয়েছিল আরিয়ানকে।

৭ অক্টোবর আবারও মুম্বাইয়ের এসপ্ল্যানেড আদালতে নেওয়া হয় আরিয়ানকে। এদিন আরিয়ানকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। এরপরেই আরিয়ানের আইনজীবী সতীশ মানেশিন্দে তার অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু (৮ অক্টোবর) আরিয়ানের আইনজীবীর অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত।

এরমধ্যে শাহরুখের গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডেকে পাঠায় এনসিবি। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মাদককাণ্ডে তার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা। পাশাপাশি আরিয়ানের বিষয়েও জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।  

১১ অক্টোবর নতুন করে মুম্বাই এসপ্ল্যানেড আদালতে আরিয়ানের জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও এনসিবি আদালতের কাছে আরো সময় চায়। এই আবেদনের ফলে ১৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। কিন্তু ১৩ অক্টোবরও জামিন দেওয়া হয় না আরিয়ানকে। এদিন আদালতে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির পর আবার তাকে পুণরায় হাজতে পাঠানো হয়।

কিন্তু আরিয়ানের আইনজীবী পুণরায় জামিন আবেদন করেন। ১৪ অক্টোবর এসপ্ল্যানেড আদালত আরিয়ানের জামিনের রায় সংরক্ষিত রাখেন। একইসঙ্গে রায় দেওয়ার বিষয়টি ২০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। এদিন মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেলে কয়েদিদের নম্বর দেওয়া হয়ে। সেই তালিকায় আরিয়ানের ‘কয়েদি নম্বর ৯৫৬’ ছিল।

কারাগারের আরিয়ান এবং তার দুই সঙ্গী আরবাজ মার্চেন্ট ও মুনমুন ধমেচাকে মনোবিদ দিয়ে কাউন্সেলিং করা হয়। এই কাউন্সেলিংয়ে ধর্মগ্রন্থ পড়ানো হচ্ছে আরিয়ানকে। মুসলিম হওয়ায় তাকে কোরআন শরিফ পড়তে দেওয়া হয়। আর আরবাজ মার্চেন্টকে বাইবেল ও মুনমুন ধমেচাকে ভগবত গীতা পড়তে দেওয়া হয়।

গ্রেফতারের ১৮দিন পরও ২০ অক্টোবর আরিয়ানের জামিন আবেদ খারিজ করে দেয় মুম্বাই এসপ্ল্যানেড কোর্ট। আরিয়ানের জামিনের পক্ষে শুনানি করেন মুম্বাইয়ের শীর্ষ আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অমিত দেশাই। এদিন জামিন না পাওয়ার পর জামিন আবেদনের জন্য মুম্বাইয়ের হাইকোর্টে আপিলের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তারা।

আরিয়ান গ্রেফতারের পর ছয়বার তার জামিনের আবেদন খারিজ করে এসপ্ল্যানেড কোর্ট। এ কারণে উচ্চ আদালতে দ্বারস্থ হন আরিয়ান খান। ২১ অক্টোবর সেখানে আরিয়ানের জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়। জামিন শুনানির আগে ২১ অক্টোবর সকাল মুম্বাইয়ের আর্থার রোডের জেলে ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শাহরুখ। কিছুক্ষণ পরেই এ অভিনেতার মুম্বাইয়ের বাড়িতে ‘মান্নাত’ তল্লাশি চালায় এনসিবির সদস্যরা।  

হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ের জামিন পান না আরিয়ান। ২৬ অক্টোবর তার জামিনের শুনানির জন্য নতুন তারিখ দেওয়া হয়। তবে ২৬ অক্টোবর মামলাটির শুনানি শুরু হওয়ার আগেই জানা যায়, বদলে গেছে আরিয়ানের আইনজীবী! এবার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগিকে এই মামলার জন্য নেওয়া হয়।  

এদিন বিচারপতি নীতীন সাম্বরের সিঙ্গেল বেঞ্চের কাছে দুই পক্ষই নিজেদের সমর্থনে বক্তব্য পেশ করবেন। যুক্তি-তর্ক শেষে আদালত পরবর্তী আদেশ দেওয়ার কথা জানান। মুম্বাই আদালত আরিয়ানের জামিনের শুনানি ২৬ অক্টোবরও অসমাপ্ত রাখে। বুধবার (২৭ অক্টোবর) শুনানি শেষে রায় দেবে বলে জানান আদালত।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো আদলতে জামিন শুনানি চলে। কিন্তু এদিনও জামিন পাননি আরিয়ান। এদিন প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় পার করে ফেলায় বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) আরিয়ানের মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতি নীতিন সাম্বরে। অবশেষে দীর্ঘ ২৬ দিন পর বৃহস্পতিবার জামিন পেলেন আরিয়ান।  

 বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।