ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

‘কোরআন পড়ে এতদিন পরে হলেও ধর্মকে বুঝতে পেরেছি’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২১
‘কোরআন পড়ে এতদিন পরে হলেও ধর্মকে বুঝতে পেরেছি’ আহমেদ শরীফ

ঢাকা: অভিনয়ে ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে মেয়ের পড়ালেখার জন্য পরিবারসহ পাড়ি জমিয়েছেন এক সময়ের রূপালী পর্দার জনপ্রিয় খলনায়ক আহমেদ শরীফ। বর্তমানে বসবাস করছেন নিউইয়র্কে।

 

এক সপ্তাহ আগে দেশে ফিরেছেন এই নন্দিত অভিনেতা। বুধবার (০৩ নভেম্বর) তথ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন সচিবালয়ে। সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলানিউজের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করেন আহমেদ শরীফ।  

দীর্ঘ দিনের অভিনয় জীবন, বর্তমানে প্রবাস জীবন কেমন কাটছে তা নিয়ে বিস্তর কথা বলেন সাড়ে আটশ’ সিনেমায় অভিনয় করা এই গুণী শিল্পী।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাস জীবন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সবকিছু আছে সেখানে, তারপরেও মনে হয় কিছুই নেই! মনে হয় আমার ভিতরে হৃদয়টা খালি। সেখানে চেনা চেহারাগুলো নেই। আমি যেটা ৫০ বছর শুনেছি- লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন; সেটি নেই। আমার পরিচালকদের চেহারা নেই। যাদের সঙ্গে জীবন কাটালাম তারা সেখানে নেই। অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। এই বয়সে নিজের বেশি কষ্ট। সেখানে আমার সময় কীভাবে চলে যাচ্ছে, ২/৩ ঘণ্টা কীভাবে দ্রুত চলে যাচ্ছে। আর আমেরিকাতে এক ঘরে বসে পত্রিকা পড়া, টিভি দেখা। পুরনো সিনেমা যেগুলো দেখা হয়নি সেগুলো ইউটিউবে দেখি। ’

এই বয়সে তিনি আর কী করেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় একটা কাজ করে ফেলেছি, সেটা হচ্ছে বাংলায় কোরআন শরীফ পড়ে শেষ করতে পেরেছি। কোরআন শরীফে কী নির্দেশ, আমি যখন মুখস্থ কোরআন শরীফ পড়তাম ছেলেবেলায়, তখন কিছুই বুঝতাম না। এখন বাংলায় কোরআন শরীফ পড়ে প্রত্যেকটি আয়াত কলবের মধ্যে, আত্মার মধ্যে ঢুকে গেছে। আল্লাহতায়ালা রসুলকে কী বলেছেন, মানুষের জন্য কোনটি উপকারী এবং কোনটি উপকারী না। কেমন শাস্তি, কোনটির জন্য। আমার সব থেকে উপকার হয়েছে- কোরআন শরীফ পড়ে আমার ধর্মকে এতো দিন পরে হলেও আমি বুঝতে পেরেছি এবং সেভাবে দিনানিপাত করছি। নামাজ, কোরআন শরীফ পড়া- এগুলোই আমার কাজ। ’

অভিনয় ছাড়া নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘এটা নিয়ে আক্ষেপ করি না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা মানুষের রিজিক কোথায় লিখেছেন, তার রিজিক সেখান থেকেই আসবে। কারণ রিজিকের মালিক আমরা জানি আল্লাহতায়ালা। তিনি আমার রিজিক ওভাবেই লিখেছিলেন। ’

একবার ওমরা এবং একবার সরকারি খরচে হজ পালন করার পর অভিনয় ছেড়ে দেন আহমেদ শরীফ। সেই স্মৃতি নিয়ে বলেন, ২০১৫ সালে ওমরাহ এবং ২০১৭ সালে হজ। আমার প্রধানমন্ত্রী, এই রকম প্রধানমন্ত্রী আর আসবে না। সেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠিয়েছিলেন হজ করতে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে হজ করেছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরঋণী। সেটা সারাজীবন আমার মনের মধ্যে গেঁথে রাখবো।

‘আমি যখন হজ করি তখন আল্লাহতায়ালাকে বলেছিলাম, এই রিজিক আর আমার দরকার নাই। এই রিজিকটা বন্ধ করে দেন। আল্লাহতায়ালা কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আমি আমেরিকায় থাকছি, খাচ্ছি। ’

গত ২৭ অক্টোবর দেশে আসেন আহমেদ শরীফ। ৩-৪ সপ্তাহ দেশে থাকবেন। তবে দেশ ছেড়ে আরেক জায়গায় গিয়ে সংসার করা কঠিন ব্যাপার জানিয়ে বলেন, ‘আমি গিয়ে পড়েছি মহামারির মধ্যে। বের হতেই পারতাম না। তখন দূতাবাসে ফোন করেছিলাম, দূতাবাস থেকে গাড়ি ভর্তি করে খাবার পৌঁছে দিয়ে গেছে। এজন্যও প্রধানমন্ত্রীকেই ধন্যবাদ জানাই। ’

শেষ জীবনে কোথায় থাকবেন- প্রশ্নে বলেন, ‘আমার মেয়ের লেখাপড়ার জন্য সেখানে যাওয়া। ওখানে যদি গ্রাজুয়েশন হয়ে যায়, তাহলে আমার ইচ্ছা আছে- বাংলাদেশে থাকবো, হয়তো একমাস সেখানে থেকে আসলাম। আমার তাতেই চলবে। এই বয়সে আমার খুব সাপোর্ট দরকার, আপনাদেরকে দরকার। আমার বন্ধু-বান্ধব যারা তাদের সঙ্গে সারাজীবন অভিনয় করেছি তাদেরকে দরকার। ’

 ‘যুক্তরাষ্ট্রে সবকিছু আছে, কিন্তু চেনা চেহারাগুলো নেই। আমি যেটা ৫০ বছর শুনেছি- লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন; সেটিই নেই! ঘরে বসে পত্রিকা পড়া আর টিভি দেখে সময় কাটে। সেখানে আমার সবকিছু আছে তারপরেও মনে হয় কিছুই নেই। ’

১৯৭২ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ভারত থেকে ফিরে শুরু করেছিলাম সুভাষ দত্তের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছবি। সে স্মৃতি নিয়ে বলেন, ‘উনি (সুভাষ দত্ত) আমার গুরু, ওই সিনেমাতে নায়কের অভিনয় করেছিলাম, নায়িকা ছিলেন ববিতা। এরপর কত সিনেমা। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ করে তো হাসাহাসি করেছিলাম। কিন্তু সেকা হিট হলো। ’

‘দেশে ১৯ কোটি লোক বলেন, ২০ কোটি বলেন, শুধু নামটি বলবেন আহমেদ শরীফ। প্রত্যেকটি লোক চেনে। আমেরিকাতেও দেখলাম- দেখা হলেই বাংলাদেশিরা বলেন- আহমেদ শরীফ ভাই! কবে এসেছেন, বসেন। ’

বর্তমান সিনেমার অবস্থা নিয়ে আলাপচারিতায় ‘তুখোড়’ অভিনেতা শরীফ বলেন, ‘মানুষ ভালো সিনেমা দেখতে আসে। ভালো সিনেমা তৈরি হলে মানুষ হলে আসবে। আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ যদি করা যায়, আমার মনে হয় বিলাসী সিনেমা হলে সিনেমা দেখার জন্য মানুষ আসবে। সিনেমা হলে আরাম আয়েশ করবো, ভালো রেস্টুরেন্টে খাবো, শপিং করবো। এমন সবাই চায়। ’

সিনেমায় ফিরতে চান কী-না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যদি আহমেদ শরীফকে নিয়ে কোনো চরিত্র তৈরি হয় যে, আহমেদ শরীফ ভালো চিত্রায়ন বা অভিনয় করতে পারবেন! মূল চরিত্রটিই আপনি (আহমেদ শরীফ) । সেখানে অভিনয় করবো। সেটা পরিপূর্ণভাবে আমাকে কেন্দ্র করে হবে। তাহলে অভিনয় করবো। ’

বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘আমি সুস্থ আছি। যে রকম এই বয়সে কিছু সমস্যা- ডায়াবেটিকস বা প্রেশার থাকে সেটা আছে। সেজন্য কন্ট্রোল করে চলতে হয়। ওষুধপত্র খেতে হয়। যেখানে ফাইভ স্টার হাসপাতালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন দেখায়, সেখানেও আমি দেখাতে পারি। সেখানে কোনো পয়সা লাগে না। এদিক থেকে আমার অসুবিধা নেই। ’
 

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
এমআইএইচ/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।