ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

পুরুষরা নারীদের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না: রোকেয়া প্রাচী

মো. জহিরুল ইসলাম মোহসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
পুরুষরা নারীদের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না: রোকেয়া প্রাচী রোকেয়া প্রাচী

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন সফল অভিনেত্রী-প্রযোজক রোকেয়া প্রাচী। ক্যারিয়ারে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য একাধিকবার মনোনীত ও পুরস্কৃত হয়েছেন।

প্রথমবারের মতো টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এসোসিশেন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি। লড়ছেন সভাপতি পদে। এছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও বেশ সরব।  

নারী দিবসে গুণী এই অভিনেত্রী বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন নিজের সফলতা, প্রতিবন্ধকতা ও নির্বাচন নিয়ে।

বাংলানিউজ: প্রথমবার নির্বাচন করছেন, এর পেছনে কারণ কী?
রোকেয়া প্রাচী:
টেলিপ্যাবের সদস্য হিসেবে অনেকদিন ধরে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা যারা প্রযোজক হিসেবে কাজ করি, তাদের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি! বিশৃঙ্খল ও পরিকল্পনাহীনভাবে চলছে সব। অথচ এই ইন্ডাস্ট্রিকে অনেকদূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব। প্রযোজক বাঁচলেই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে। এই প্রযোজকরা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন এবং সাংগঠনিকভাবেও দুর্বলতা রয়েছে। এগুলো নিয়ে যখন আমার সমমনা প্রার্থীরা কথা বললেন, তখন তাদের সমস্ত পরিকল্পনা শুনে এবং আমি নিজেও এসবের সাক্ষী হিসেবে চিন্তা করে মনে হয়েছে এখানে আমি কাজ করতে পারবো। আমি কিছু দিতে পারবো। এরপরই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করি।

বাংলানিউজ: জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
রোকা প্রাচী:
জয়ের বিষয়টি তো আগে থেকে বলা যায় না। তবে আমি মনে করি সবাই আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন এবং আমাকে টেলিপ্যাবে কাজের সুযোগ করে দেবেন।

বাংলানিউজ: একসঙ্গে অনেকগুলো সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছেন, স্বীকৃতি-সফলতা দুইটিই পেয়েছেন। এর পেছনের গল্পটা কী?
রোকা প্রাচী:
প্রথমত আমি যে কাজটিই করি সেটা অনন্ত ভালোবাসা থেকে, সততার সঙ্গে এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে করি। ধরুন আমি একজন নারী, আমি মা, আমি আবার বোনও- এই দায়িত্বগুলো আমি পালন করছি। আমি অনেক কর্মব্যস্ত, কিন্তু একজন মায়ের জায়গায় শতভাগ সৎ ও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছি। অভিনয়ের জায়গায়ও সেটাও একইভাবে করছি এবং আমি পুরো বিষয়টি খুব এনজয় করি। আর এটি যখন আপনি আপনার কাজের মধ্যে জড়িয়ে দেবেন, তখন দেখবেন আনন্দের ভাগটাই বেশি।  

বাংলানিউজ: সবকিছু একসঙ্গে সামলাতে নারী হিসেবে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়? 
রোকেয়া প্রাচী:
আমি নারী হিসেবে কোনো প্রতিবন্ধকতা পাই না, কারণ আমি মনে করি এগুলো আমার বিভিন্ন সত্তা। নারী হিসেবে আমি যে মা, ওটা আমাকে খুব আনন্দিত ও গর্বিত করে।  

বাংলানিউজ: নারী হিসেবে যদি প্রতিবন্ধকতার শিকার হন, তাহলে সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন?
রোকেয়া প্রাচী:
সামাজিক ও পারিবারিকভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতা নিয়েই আমরা পথচলি। যেটা থাকেই সমাজে- বেগম রোকেয়ার সময় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত, কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, থাকবেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধকতাগুলোর পরিবর্তন হয়। আমি সেগুলোকে সমাজের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরে নিয়েই কাজ করছি। আমার মনে হয় আমি যদি যোগ্য হই, আমার জায়গাগুলোকে তৈরি করতে পারি, তাহলে আর প্রতিবন্ধকতা আসবে না। একজন দক্ষ মানুষ নারী হওয়ার কারণে তাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, এমনটা কিন্তু কখনো হয় না।

বাংলানিউজ: পুরুষরা কি নারীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করে?
রোকেয়া প্রাচী:
নারী হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যেমন-আমি মা হতে পারি। অনেকেই নারী পুরুষ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি মনে করি নারী-পুরুষের কোনো লড়াই নাই, বিভেদ নাই। পুরুষ নারীর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এটিও আমি কখনো মনে করি না। আমি মনেকরি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সময়ের সাথে সাথে আমাদের সঙ্গে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল আছে থাকবে- তা নানান ফরম্যাটে। কিন্তু আমি যদি আমার জায়গাগুলোকে তৈরি করতে পারি তাহলে আর প্রতিবন্ধকতা হবে না। আমি যদি ভালো অভিনয় পারি, তাহলে কি আমাকে অভিনয়ে কেউ নেবে না? আমি যদি পরিচালনায় দক্ষ হই, তাহলে কেউ বলবে না উনি নারী ওনাকে পরিচালনায় নেওয়া যাবে না! এটা কিন্তু কখনো হয় না। একজন দক্ষ মানুষ যখন কাজ করতে চেয়ারে বসতে যাবেন, তখন নারী দেখে ওনাকে বসতে দেওয়া যাবে না- এই প্রশ্ন কিন্তু কখনো ওঠে না। যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে যখন সংশয় তৈরি হয়, তখনই এটা বলা হয়। এই যেমন আমি এবার টেলিপ্যাবের নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি, আমাকে কিন্তু নারী হিসেবে আরো বেশি স্বাগত জানিয়েছেন সবাই। সে জায়গা থেকে মনে হয়, নারী আসলে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় না, নারী যদি যোগ্য হয়ে ওঠতে পারে, নারী যে কোনো জায়গায় সফলভাবে পৌঁছাতে পারবে। এবং আমি খুবই সৌভাগ্যবান, কারণ আমি কখনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়নি।  

বাংলানিউজ: যে নারীরা সফল হতে চান, কিন্তু নানা ভয়ে আগাতে পারছেন না, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? 
রোকেয়া প্রাচী:
প্রথমত নিজের উপর বিশ্বাস করতে হবে। আমি যদি বিশ্বাস নিয়ে কোনো কাজ করতে চাই, তাহলে কাজটি করতে পারবো; এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। তখন আমি আমার বিরুদ্ধে যারা আছেন- আমার পরিবার বা সমাজের বাধা; সেটিকে জয় করতে পারবো। বাধা থাকবেই, এটা আসলে জীবনের একটা অংশ। বাধা হিসেবে হতাশ না হয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে।  

বাংলানিউজ: সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নারীদের নানা সময় হয়রানি করা হয়। আপনার দৃষ্টিতে এটা বন্ধের উপায় কী?
রোকেয়া প্রাচী:
এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। এই সমস্যাটার সমাধান এখনো হয়নি। এই ব্যাপারে অবশ্য আমাদের পরিবারের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা মায়েরা বা পরিবারের সবাই ছোটবেলা থেকেই যদি এই শিক্ষাটা দিই- নারীদের অসম্মান করা যাবে না, কোনো কুরুচিপূর্ণ কথা বলা যাবে না, নারীর প্রতি সহিংস হওয়া যাবে না। এই শিক্ষাটা প্রথমে পরিবার থেকে আসতে হবে। বাবা যদি তার সন্তানের সামনে স্ত্রীকে অসম্মান করেন, তাহলে সেই সন্তানটা কিন্তু দেখলো যে এই অসম্মান করাটা একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। তাই পারিবার থেকেই নারীর প্রতি অসম্মান ও সহিংসতা রোধ করতে হবে। শুধুমাত্র লেখাপড়া শিখিয়ে এসব সম্ভব না। এছাড়া আইনেও এটা নিয়ে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যখন কয়েকজনকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে, তখন অন্যরা সেটা দেখে ঠিক হয়ে যাবেন।  

বাংলানিউজ: আপনি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন?
রোকেয়া প্রাচী:
আমি এসবের শিকার হইনি বললে মিথ্যা হবে। কারণ আমি যখন রাজনীতিতে নেমেছি, তখন হয়েছে; যখন আমি সারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্দোলন করেছি, তখন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক বিভিন্ন কূটক্তি করেছে। সেটাকে অবশ্য আমি ইগনোর করেছি; কারণ যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলে তারা খুবই ছোট মনের-তাদের গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
জেআইএম/এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।