মৌলভীবাজার: চা বাগানের নির্জন সড়ক। তবে পাকা সড়ক নয়।
সকালটা বেশ নির্জন বলেই পাহাড়ি বন সংলগ্ন চা বাগানে জীববৈচিত্র্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা প্রবল। পা টিপে টিপে নীরব-পর্বে তীব্র অনুসন্ধান চলছে দুর্লভ কোনো কিছুর। সময় গড়ায়, কিন্তু প্রাপ্তির ঝুলি পূর্ণ হয় না!
হঠাৎ বেজির আগমন! সাধারণ ‘বেজি’ বলেই খানিকটা অবহেলা। কিছুটা পাশ কাটানোর চেষ্টা। সেই বেজিটা আকারে সাধারণ বেজি হতে তুলনামূলক বড় বলেই মন চাইছিল ছবিটি যেন বৃথা না যায়! এই ভাবতে ভাবতে দ্রুত ক্যামেরাবন্দি হয়ে গেল প্রাণীটি।
এটিলা থেকে ওটিলা, এ পাহাড়ি পথ থেকে ওই বুনোপথ এরুপ করে সময়ের ব্যবধান ঘণ্টা চারের! তাতেই ক্লান্তির স্পর্শ সর্বাঙ্গে! সেদিনের মতো কিছু পাখি আর বেজির দৃশ্য নিয়েই সন্তুষ্টি খোঁজে মন!
মনিটরে সেই বেজির ছবি আসতেই বেজির মুখে লম্বা সাদা টান ভেসে উঠলো। এটা তো কোনো সাধারণ বেজি নয়! বিশেষ প্রজাতির! আনন্দে ভরে উঠলো মন! সাধারণ বেজি ভেবে একে অবহেলা করা হলে কখনোই আর এই ‘কাঁকড়াভুক বেজির ছবি ক্যামেরাবন্দি করা হতো না। তখন তার ছবি ধারণ করা হয়েছিল বলেই জানা গেল এটি সাধারণ বেজির মতো সহজলভ্য বেজি নয়।
‘কাকড়াভুক বেজির বৈজ্ঞানিক নাম Herpestes urva. নানান তথ্যসূত্র ঘেঁটে জানা গেল কাকড়াভুক বেজি সংকটাপন্ন প্রজাতির। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বাংলাদেশের লাল-তালিকায় একে ‘সংকটাপন্ন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘কাঁকড়াভুক বেজির মুখে সাদা রঙের লম্বা দাগ থাকে। এরা মূলত চিরসবুজ পাহাড়ি বনের বাসিন্দা। তবে চা বাগানেও এদের বিস্তৃতি রয়েছে। ছায়াঘেরা নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে এরা একা বা দলগতভাবে বসবাস করে। এরা নিশাচর প্রাণী। তবে ভোরে এবং সন্ধ্যার আগে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। ’
এরা লেজবিহীন দৈর্ঘ্যে ৪৫ থেকে ৫২ সেন্টিমিটার এবং লেজের দৈর্ঘ্যে ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়। ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণী, ছোট আকৃতির সরীসৃপ, নানান জাতের কীটপতঙ্গ এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২৩
বিবিবি/এএটি