ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাহাড়ের কোলে সিঁদুররঙা উদাল

আসিফ আজিজ ও মীর সানজিদা আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৩
পাহাড়ের কোলে সিঁদুররঙা উদাল

বান্দরবান থেকে ফিরে: আমাদের বান্দরবান অভিযানের ছিল শেষ দিন। থানচি, তিন্দু, রেমাক্রি, ছোটমোদকের পাহাড়, জল, জঙ্গল পেরিয়ে আবার বান্দরবান শহরে আমরা।

সকালে বেরিয়ে পড়লাম শহর ও আশপাশের এলাকা দর্শনে। শেষ বিকেলে পৌঁছুলাম শহর থেকে একটু দূরেই মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে।

ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে আমরা যখন রোপওয়ের কাছে, তখন চোখ পড়লো অদ্ভুত এক গাছের দিকে। পাতা নেই, অথচ সমস্ত গাছটাই সিঁদুরে লাল রঙের ফলে ভরা। যদিও ফুল কি ফল সেটা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায় আমাদের। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম কাছে। নূর ভাইও ছুটলো ক্যামেরা নিয়ে। জুম করে তোলা ছবি দেখার পর যেন আরও সুন্দর লাগলো ফলগুলি। তখনও নাম জানিনা। তাতে কি হয়েছে। ছবি তুলতে তো সমস্যা নেই।
ban-1
ঢাকায় ফিরে ছবিগুলো দেখালাম অনেককে। কেউই চিনতে পারলো। বলতে পারলো না নাম। অবশেষে সমাধান দিলেন বিশিষ্ট প্রকৃতিবিদ মোকাররম হোসেন। সাহায্য করলো আরেক প্রকৃতিপ্রেমী ইচ্ছেঘুড়ির ছোট্ট সহকর্মী মীম।

উদালের বৈজ্ঞানিক নাম Sterculiaceae villosa. গোত্র Sterculiaceae. এর স্থানীয় নাম চান্দুল। আমাদের শহুরে সামান্য উদ্যানে উদাল দেখা পাওয়া কঠিন। হাতেগোনা দু’একটি কালেভদ্রে দেখা মেলে। সে কারণেই উদালের সঙ্গে আমাদের চেনা জানা কম।

তাছাড়া এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা। তাই বান্দরবানে সহজেই এদের দেখা মেলে। বেশ কয়েকটি গাছের দেখা পাবেন বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মেঘলায়। গাছ লম্বায় ২০ মিটার বা তার চেয়েও উঁচু হতে পারে। শীতে সব পাতা ঝরিয়ে একেবারে উদোম হয়ে পড়ে। কাণ্ডের রং সাদাটে। পাতা একটু বড় ও খাঁজকাটা। অবশ্য ফুল ফলের মৌসুমে পাতার দেখা পাওয়া ভার।

উদাল বা চান্দুল মাঝারি আকৃতির পত্রমোচি গাছ। কচি ডাল, পাতার বোঁটা ও মঞ্জরি রোমশ। পাতা ডালপালার আগায় গুচ্ছবদ্ধ থাকে। ২৪ থেকে ৪০ সেমি চওড়া, প্রত্যেকটিতে ৫/৭টি বড় লতি থাকে, নিচটা বেশ রোমশ। বোঁটা পাতার মতোই লম্বা। উপবৃতি অনেকটা বড়, চওড়া, ও বর্শাকৃতির। ban-22

মাঘ মাসের শেষভাগে শীতের তীব্রতা একটু কমে এলেই উদালের ফুল ফোটার প্রস্তুতি শুরু হয়। বসন্তের শুরুতে অজস্র থোকা থোকা ফুলে গাছ ভরে উঠে। ঝুলন্ত মঞ্জরিতে লম্বা ডাঁটায় হালকাভাবে গুচ্ছবদ্ধ কমলা-হলুদ রঙের ফুলগুলো ফোটে। নিষ্পত্র ডালের আগায় ৫ থেকে ৮টি মঞ্জরি, পুং ও উভলিঙ্গ দু’ধরনের ফুল মিশ্রিত। বৃতি নলাকার, বাইরে রোমশ।

উদালের পরাগকোষ ১০টি। পত্রহীন ডালপালায় এমন পুষ্পপ্রাচুর্য খুব সহজেই নজরকাড়ে। হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুলগুলো প্রায় দেড় সেন্টিমিটার চওড়া। ফুলের ভেতরটা বেগুনি রঙের। ফুল ঝরে পড়তে না পড়তেই ডালের আগায় ফল আসতে শুরু করে। কিছুটা রোমশ গায়ের এই ফলগুলোর পাকা রং গাঢ়-লাল। বংশবৃদ্ধির সহজ উপায় বীজ।

উদাল সাধারণত বসন্তের ফুল। বাংলাদেশসহ ক্রান্তীয় এশিয়া অঞ্চল এর জন্মস্থান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে উদাল গাছ দেখা যায়।

উদালের ওষুধি গুণও কম নয়। এর বাকল থেকে তৈরি শরবত শরীর ঠাণ্ডা রাখে। এছাড়া ফুলে ব‍ৃন্ত ছেঁচে পানির সঙ্গে গুড় বা চিনির মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যাথা দূর হয়। গাছের পাতা দুর্বলতা কমাতে ব্যবহার করেন হবিগঞ্জের অধিবাসীরা। বাকল এবং বৃন্ত শারীরিক দুর্বলতা কমানোর প্রতিষেধক হিসেবেও বেশ উপকারী।

তবে সব ছাপিয়ে এর সৌন্দর্য দেখতে আবারো যেতে ইচ্ছে করে বান্দরবানে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৩
এসটিএ/এএ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।