ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাখির খেলা, প্রাণের মেলা জাহাঙ্গীরনগরে

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
পাখির খেলা, প্রাণের মেলা জাহাঙ্গীরনগরে ছবি: জিএম মুজিবুর

সবুজ-শীতল গাছ গাছালির নিচে হাঁটতেই শোনা গেল পাখির কলতান। একটু এগোতে কিচিরমিচির শব্দগুলো আরও স্পষ্ট হলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষের মনোযোগ লেকের ওপর। মুক্ত আকাশে তাদের উড়াউড়ি, স্বচ্ছ জলে লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে গলা ডুবিয়ে মাছ ধরা আর ডুব খেলা!

জাহাঙ্গীরনগর থেকে ফিরে: সবুজ-শীতল গাছ গাছালির নিচে হাঁটতেই শোনা গেল পাখির কলতান। একটু এগোতে কিচিরমিচির শব্দগুলো আরও স্পষ্ট হলো।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষের মনোযোগ লেকের ওপর। মুক্ত আকাশে তাদের উড়াউড়ি, স্বচ্ছ জলে লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে গলা ডুবিয়ে মাছ ধরা আর ডুব খেলা!
 
নানান জাতের পাখির এমন দৃশ্য পড়ন্ত বিকেলে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকেই আকর্ষণ করছে। পাখি দেখতে, পাখির কলতান শুনতে তাই ভিড় এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছুটির দিনগুলো ক্যাম্পাস পরিণত হয় মিলনমেলায়।
 
শীতকালে বিশেষত নভেম্বর মাসে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসে পরিযায়ী পাখি, আবার তারা চলে যায় ডিসেম্বরে। বিজয় দিবসে ক্যাম্পাসে পাখিদের মধ্যে সরালী, পানকৌড়ি, জলপিপি, শামুক, খোলই চোখে পড়ে বেশি।
 
বিকেলে প্রীতিলতা ও জাহানারা ইমাম হলের পিছনের লেকে পাখিদের উড়াউড়ি ছিল মনোমুগ্ধকর। গাছের ডালে বসেছিল সারস। আর লাল শাপলার মধ্যে ডুবোডুবি, শাপলা পাতায় বসে ডানা ঝাপটে গা শুকানো- এসব দৃশ্য ধারণ করছিলেন পাখিপ্রেমীরা।
 
পাখি দেখতে জাহানারা ইমাম হলের পিছনের লেকে এসেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্র মুকুল। তার সাত বছরের ছেলে মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করছিল পাখির দৃশ্য।
 
আট বছর আগে ক্যাম্পাসে পড়ালেখা শেষ করে যাওয়া মুকুল বলেন, সময় পেলে ছুটির দিনগুলোতে মাঝে মধ্যেই আসেন। তবে পাখির মৌসুমে বাদ পড়ে না ছুটির দিনগুলো।
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখির আগমন প্রশাসনিক ভবনের এলাকার লেকের মাঝ দিয়ে যাওয়া রাস্তার উপর দাঁড়িয়েও পাখি দেখছিলেন শতশত পাখিপ্রেমী। পাখির নিরাপদ বিচরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে সতর্কবাণী।
 
‘পাখির নিরাপদ বিচরণের জন্য ঢোল বাজানো, পটকা ফুটানো, হাততালি ও জোরে শব্দ করা যাবে না। পাখিদের বিরক্ত করবেন না’, এমন বার্তা দিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।
 
বিকালে পাখিরা উড়াউড়ি বেশি করে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
 
আর গত কয়েক বছরে পাখির সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শীতকালে পাখি আসা শুরু হলেও এ বছর একটু পরে নভেম্বরের শেষ দিকে থেকে আসা শুরু করেছে পাখি। সেগুলো আবার ফেব্রুয়ারি-মার্চে চলে যাবে। সাইবেরিয়া ছাড়াও হিমালয়, কাশ্মীর থেকেও পাখি আসে বলে জানান এই পাখি গবেষক।
 
তিনি বলেন, আমাদের জলাশয়ে ১৮৯ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৬০-৬৫ পরিযায়ী সারা বছর আসে। এদের মধ্যে দেশীয় অনেক প্রজাতির পাখি আছে যেমন: জলপিপি, হটটিটি। এগুলো খোলা জায়গায় বাসা করে।
 
গত কয়েক বছরে প্রজাতির সংখ্যা বেড়েছে। তবে ২০০৯-২০১১ সাল পর্যন্ত জলাশয়ে মাছ চাষের কারণে সংখ্যা কমে গিয়েছিল।

এবছর নতুন প্রজাতি ‘লিটল গ্রিভ’ নামে একটি দুর্লভ পাখি এসেছে এবং দুই জোড়া বাচ্চা দিয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ।

নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে পাখিগুলো সুদূর থেকে আসে জানিয়ে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, শুক্র-শনিবারে ক্যাম্পাসে প্রচুর গাড়ি ও মানুষ ঢোকে। যা বিরক্তির কারণ হয়ে যায়।

মানুষের চাপ কমানো উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান তারা যেন পাখিদের বিরক্ত না করে, পাখি উড়িয়ে সেলফি না তুলে।

এদিকে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী ৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬তম পাখি মেলার আয়োজন করবে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

মেলার আয়োজনে থাকবে পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, অডিও-ভিডিও’র মাধ্যমে পাখি চেনা প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।