ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ঘুঘুকে দৃষ্টিহীন করে পাখি শিকারের ফাঁদ!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৭
ঘুঘুকে দৃষ্টিহীন করে পাখি শিকারের ফাঁদ! নিষ্পাপ ঘুঘুর দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি হরণ করে বর্বর শিকারী। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): পৌষের সকাল, কিংবা দুপুর-বিকেল। চারদিকের পাকা ধানগুলো কেটে নিয়ে গেছে কৃষক। ধানকাটার বাকি যে অংশ, তাতে ক’টা পাকা ধান খাওয়ার লোভে মাটিতে নেমে আসে নানান পাখপাখালি। তাদের ডানাঝাপটানোর ছন্দময় শব্দে প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যকে ফিরে পায় বারবার।

এই দৃশ্য দেখে চমকে ওঠে একজনের মন। তার ভেতরের উচ্ছ্বাস রোমাঞ্চ জাগানোর পাশাপাশি জাগায় লোভ! বিস্তার করে লালসা।

সে মনে মনে ছক কষে বসে, এই পাখিগুলোকে আটকতে হবে। তারপর সেই পাখিগুলোকে বাজারে বেঁচে পকেট ভরতে হবে।  

এরপর ক্রমশই জট পাকাতে থাকে – কী করে পাখিগুলোকে আটকাবে সে? ছক মতো, এক ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করে একটি তিলা-ঘুঘু (Western spotted Dove)। এই পাখিটাকে নিয়েই শত শত পাখি ধরার অপকৌশল পাতে সে।

অন্যের পরামর্শ মতো সেই তিলা-ঘুঘুকে কিছুটা প্রশিক্ষণ দেয়। তাতে শিকারীর ফাঁদ হয়ে ওঠে সেই পাখিটি। আরও শিকার করার ঘৃণ্য ফাঁদ তার থামে সেই নিষ্পাপ ঘুঘুর দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি হরণ করে!  

হীন লোভ আর লালসা তাকে চরম নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে নিয়ে যায়! সে সুঁই আর সুতো দিয়ে সেই তিলা-ঘুঘুর চোখের দু’টি পাতা সেলাই করে দেয়। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পাখিটি তার স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি হারায়। আর মেলতে পারে না চোখের দু’পাতা!ঘুঘুটিকে উদ্ধারের পর অবমুক্ত করেন কর্মকর্তারা।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমতারপর সেই দৃষ্টিশক্তিহীন পাখিটিকে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে নিয়ে পাখি ধরার ফাঁদে ব্যবহার করা হয়। সেই পাখিটিকে দিয়েই অন্য পাখিগুলোকে ডেকে এনে জাল দিয়ে আটক করা হয়।  

সম্প্রতি মৌলভীবাজার রেঞ্জের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কমলগঞ্জের উত্তর বালিগাঁও এলাকা থেকে সেই চোখবাঁধা তিলা-ঘুঘুটিকে উদ্ধার করে। সঙ্গে উদ্ধার করে আরও দু’টি পাখিকে।

এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমরা চোখবাঁধা প্রশিক্ষিত তিলা ঘুঘুসহ মোট তিনটি পাখি উদ্ধার করি। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আগেই শিকারী পালিয়ে গেছে। আমরা তার পাখি ধরার সরঞ্জামগুলো জব্দ করেছি।

ঘুঘুর চোখ সেলাই সম্পর্কে সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ঘটনাটি অত্যন্ত নির্মম। আমরা যখন পাখিকে উদ্ধার করি তখন তার দু’ চোখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। খুব সর্তকতার সঙ্গে সেই পাখিটির দু’চোখের সূতোটি কেটে দেওয়া হয়। তারপর দেখি সে তার চোখের পাতা স্বাভাবিকভাবে মেলতে পারছে। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে তারপর তাকে অবমুক্ত করি। সে ডানা মেলে উড়ে যেতে পেয়েছে।     

তবিবুর রহমান জানান, দু’পাশের দু’টো জালের মাঝখানে বাঁশের খাঁচার ভেতর থেকে ডাকতে থাকে চোখবাঁধা ঘুঘুটি। সেই ডাক শুনে তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য গাছের ডালে বসে থাকা ঘুঘুরা নিচে নেমে আসে। আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা লোকটি তখনই সুতো টান দিলে জালটি সঙ্গ দিতে আসা পাখিটির ওপর দ্রুত পড়ে যায়। আটকা পড়ে যায় পাখিটি। এভাবেই প্রতিদিন অবৈধভাবে অসংখ্য পাখি ধরতো সেই শিকারী।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭ 
বিবিবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।