ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাইক্কা বিলের অ্যাক্রোবেট বেগুনি কালেম

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
বাইক্কা বিলের অ্যাক্রোবেট বেগুনি কালেম বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম / ছবি: আসিফ-বাংলানিউজ

শ্রীমঙ্গল থেকে: বাইক্কা বিলের সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকাড়া পাখিটির নাম সম্ভবত বেগুনি কালেম। আমাদের দেশের আবাসিক এ পাখিটি মাছ-পাখির অভয়াশ্রমে অভ্যর্থনা জানাতে সদা প্রস্তুত। এটা যে তাদের ঘর-বসতি।

বাইক্কার স্থায়ী বাসিন্দা এরা। পুরো বিলজুড়ে বিচরণ এদের।

থাকে দলব্ধভাবে। চলাফেরায়ও যেন তাই রং-ঢং একটু বেশিই। তবে সতর্ক খুব।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
টিকিট কাউন্টার থেকে পশ্চিম দিকে ওয়াচ টাওয়ারের দিকে হিজল-কড়স বন পেরিয়ে শনবনের আড়ের পানিতে দেখা পাওয়া গেলো তাদের। তখনও দর্শনাথী আসা শুরু হয়নি। তাই বেশ নিশঙ্ক তারা। আপন মনে শাপলা আর কচুরিপানার বাদায় খাবার খাচ্ছিল। দলে পরে যারা যোগ দিলো তাদের দেখা গেলো আড়মোড় ভাঙতে।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
একটু পরে টিকিট কাউন্টারের দিকের একটি ড্রেনের পাড়ে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি কালেমের। উল্টো ঘুরে তাই আবার পছন্দের এ পাখিটির কাছে যাওয়া। গিয়ে পাওয়া গেলো অন্য এক কালেম। ঢঙ্গীই বলা যায় তাকে। তে কালেম আগেও দেখেছি অনেক। কিন্তু এবার দেখার বিশেষত্ব আলাদা।

তিনটিকে একসঙ্গে দেখা গেলো ড্রেনের পাড় ধরে হাঁটতে। কাছে যাওয়া কঠিন এদের। একটু আওয়াজ পেলেই লম্বা পায়ে ভর দিয়ে মোটা গলায় চাক চাক ডেকে ছুট দেয়। অতি সন্তর্পণে তাই চুপিসারে লেন্সে ভর করে নজর রাখছিলাম।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
হঠাৎ একটিকে দেখা গেলো দলছুট হয়ে মুখে কচুরিপানার একটি ডাটা মুখে নিয়ে খেলতে। সে যেটা করছিল তাকে খেলা বলাই উত্তম। মুখে নিয়ে ছুটে ছুটে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অ্যাক্রোবেটদের মতো কসরত প্রদর্শন করছিল। আগ্রহ নিয়ে তার কসরতে করছিল মুগ্ধ। সবুজ ঘাসে নরম আলোয় আলোর নাচোন নেচে অবশেষে মুখ থেকে ঘাসে নামালো ডাটাটি।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
আগ্রহ বাড়লো আরও। এখন কি করবে সে? খাবে? এটা পুরোটা কি সে খায়? এসব ভাবতে ভাবতেই ছেঁড়া শুরু করলো ঠোঁট দিয়ে। কিন্তু কোন অংশ খেলো তা বোঝা গেলো দৃষ্টিসীমা থেকে।

বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষক তানিয়া খানও বলছিলেন চতুর দুর্লভ আবাসিক পাখি কালেম মাঝে মধ্যেই এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটায়। তবে ঠিক কি সে করে বা করতে চায় সেটা স্পষ্ট বোঝা মুশকিল।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
এদের ইংরেজি নাম Purple Swamphen বৈজ্ঞানিক নাম Porphprio Porphyrio।

বাইক্কা বিলের কচুরিপানা, শন তাদের বাসা বাঁধবার প্রিয় জায়গা। কয়েকটি পাহাড় আর হাওরে কেবল এদের দেখা যায়। তবে চোরা শিকারিদের জন্য এদের অস্তিত্ব হুমকিতে। খাবার খাওয়ার সময় এরা অদ্ভুতভাবে লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে খায়। তখন বেরিয়ে পড়ে লেজের সাদা অংশ। মাথার চাঁদি বর্মে ঢাকা, ঠোঁট মোটা। ছেলে ও মেয়ে পাখির পার্থক্য বোঝা মুশকিল। দৈর্ঘ্যে ৪৫ সেমি পাখিটির ওজন হয় ৬৫০ গ্রামের মতো।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
এরা মূলত ৯ মাস বাইক্কা বিলে থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে পাহাড়ি এলাকায়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। ডিম দেয় ৩ থেকে ৭টি। বাসার জন্য নলখাগড়া আর শুকনো কচুরিই পছন্দ বেশি। হাওর, বিল, নলবন ও ঘাসওয়ালা ভূমি এদের পছন্দ। বিভিন্ন ধরনের বীজ, শস্যদানা, শামুক এদের প্রিয় খাবার। খাবার নিয়ে দৌড় দেওয়া বা বিভিন্ন কসরত করা এদের স্বভাব। বলছিলেন তানিয়া খান।
বাইক্কা বিলের বেগুনি কালেম- ছবি: আসিফ আজিজ
পর্যটকরা গিয়ে হইচই না করে যদি নিরিবিলি পাখি দেখা উপভোগ করে তাহলে কালেমের এসব কীর্তি দেখতে পাবে বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন
** ‘বজ্জাত’ হরিণ ভাগিয়ে দিলো বনমোরগ
** যতো শীত ততো পাখি বাইক্কা বিলে
** বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।