ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিপদাপন্ন সুস্বাদু ‘বড় বাইম’ রক্ষায় উদ্যোগ নেই

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
বিপদাপন্ন সুস্বাদু ‘বড় বাইম’ রক্ষায় উদ্যোগ নেই বিপদাপন্ন সুস্বাদু ‘বড় বাইম’ রক্ষায় উদ্যোগ নেই

মৌলভীবাজার: শ্রীমঙ্গলের এক মৎস্যজীবী অনেকগুলো মাছের সঙ্গে নিয়ে এলেন বিরল প্রজাতির একটি মাছ। এই মাছটি দেখে বাড়ির সবাই অবাক‍! বাড়ির বয়োবৃদ্ধ গৃহকর্তা অন্যমাছগুলো রেখে শুধুমাত্র সাপের মতো এই ‘বাইম’ মাছটি কিনে নিলেন।

গৃহকর্তার উদ্দেশ্য ছিল কয়েক বছর পর হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া এই বিপন্ন ‘বড় মাইম’ মাছটির সঙ্গে বাড়ির নবীন সদস্যদের পরিচিত করিয়ে দেয়া। সাপ ভেবে যেন কখনো অবহেলা না করা হয় আমাদের দেশের এই সুস্বাদু মিঠাপানির মাছটিকে।

এক সময় এই ‘বড় বাইম’ মাছটি আমাদের গ্রামবাংলার নদী, নালা, খাল, বিল ব্যাপকভাবে দেখা যেতো। কয়েক বছরের মধ্যেই এরা প্রায় বিলুপ্তির কাতারে চলে গেছে। বর্তমানে এ মাছগুলো আর চোখেই পড়ে না। এর ইংরেজি নাম একাধিক: Tire Track Spiny Eel, Zig-zag Eel, Tire Track Eel, Marbled Spiny Eel।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এই ‘বড় বাইম’ মাছটি বাংলাদেশে ‘বিপদাপন্ন’।  

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য জীববিদ্যা এবং জিনতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসার ড. মোস্তফা এআর হোসেইন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাইম জাতের যত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় আমাদের দেশে তার ভেতর সবচেয়ে বড় এই মাছটা। তাই তার নাম বড় বাইম। এক সময় আমাদের দেশে খালে-বিলে, নদী-নালায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখন যেহেতু এই মাছটির ‘বায়ো-ডায়াভারসিটি’ বিভিন্ন কারণে অনেকটাই কমে গেছে। প্রাকৃতিক কারণে কমেছে, মানবসৃষ্ট কারণে কমেছে কিংবা নদী, নালা, খাল, বিল প্রভৃতি শুকিয়ে যাচ্ছে এ রকম নানান কারণে কমেছে। ’ 

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ টন কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশি ভাগই হয়তো যতটুকু আমাদের ধানক্ষেতে, পাটক্ষেতে বা সবজিক্ষেতে দরকার তা থেকে অনেক বেশি পরিমাণে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃষ্টির সময়, বন্যার সময় এই বিষাক্ত কীটনাশকগুলো খালে-বিলে-নদীতে গিয়ে পড়ে এবং জলজ প্রাণীদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাইম মাছগুলো ‘বটম-ফিডার’। জলাভূমির একদম নিচে ওরা থাকে। বিষাক্ত কীটনাশক জলাভূমিতে এসে পড়লে ‘বটম’ দূষণের শিকার হয় বা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এই মাছের ‘বায়ো-ডায়াভারসিটি’ কমে যাচ্ছে। ’ 

এই মাছটি প্রজনন প্রসঙ্গে প্রফেসার ড. মোস্তফা এআর হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই বিপদাপন্ন বড় বাইম মাছটাকে ‘ডমিস্টিকেইট’ করা বা চাষবাস করা অথবা পোনা উৎপাদনসহ এর প্রজনন ঘটনোর ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এই সুস্বাদু মাছটি ধীরে ধীরে আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ’ 

বিপন্ন এ মাছটি সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘এটি অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ। মাছের বাজারে এই মাছের দাম ৮শ থেকে এক হাজার থেকে আরো বেশি হয়ে থাকে। মাছটি এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে এ কিলোগ্রামও হয়ে থাকে। মাছটিকে চাষের আওতায় আসতে হবে এবং এই মাছগুলোর যেখানে থাকে সেই নদী, নালা, খাল, বিল এসব জলাভূমিকে রক্ষা করতে হবে। ছোট বাইমের পোনা ধরা যাবে না। বাইম মাছের পোনা বাজারে বিক্রি বন্ধ করতে হবে। ’ 

এখনই এই মাছটিকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তবে তা আমাদের দেশের জলাভূমিগুলো থেকে তা চিরতরে হারিয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি এই বিপদাপন্ন মাছটিকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মৎস্য গবেষক প্রফেসার ড. মোস্তফা এআর হোসেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।