ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ায় ভাল্লুক ও বন্য ছাগলের পদচিহ্ন!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
লাউয়াছড়ায় ভাল্লুক ও বন্য ছাগলের পদচিহ্ন! এশীয় কালো ভাল্লুক ও বন্য ছাগল, ছবি : সংগৃহীত

মৌলভীবাজার: বিচিত্র সব প্রাণীর সরব আবাসভূমি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। দিনের আলো প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিবাচর প্রাণীরা খাবারের সন্ধানে যেভাবে ছোটাছুটি শুরু করে, ঠিক তেমনি ঘটে নিশাচর প্রাণীদের বেলায়ও। অধিকাংশ প্রাণীর নিরাপত্তা দেয় দুর্গম মাটির গোপন গহ্বর।

পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্নপ্রাণী উল্লুকের (Hoolock Gibbon) অন্যতম আশ্রয়স্থল লাউয়াছড়া। বৃক্ষবিচরণকারী উল্লুককেই লাউয়াছড়ার প্রধান প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি আরও দুটি বিপন্ন প্রাণীর পায়ের ছাপ লাউয়াছড়ায় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

দুর্লভ জীববৈচিত্র্যের মহামিলনকেন্দ্র আমাদের এই চিরসবুজ বন। এখানকার বন্যপ্রকৃতির নির্জনতায় এবং হাজার হাজার প্রজাতির গাছগাছালি ও লতাগুল্মের আড়ালে লুকিয়ে আছে নানা প্রকারের স্তন্যপায়ী, উভচর, সরীসৃপ প্রভৃতি ক্যাটাগরির অসংখ্য প্রাণী।

এবার যোগ হলো আরেকটি মহাবিপন্ন প্রাণী এশীয় কালো ভাল্লুক (Asian Black Bear)। অর্থাৎ ভাল্লুকের পায়ের ছাপ লাউয়াছড়ায় পাওয়া গেছে। শুধু ভাল্লুক নয়, মিলেছে বন্য ছাগলের (Red Serow)  পায়ের ছাপও।

ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স এর প্রধান নির্বাহী ও সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান দাবি করে বলেন, আমাদের সংগঠনে কনজারভেশনের কাজে জড়িত মুরং সম্প্রদায়ের লোকজন লাউয়াছড়ায় ভাল্লুক এবং বন্য ছাগলের পায়ের ছাপের বিষয়টি আমাকে নিশ্চিত করে। মুরংরা কখনো ভুল শনাক্ত করে না এবং এটা শতভাগ নিশ্চিত।

ভাল্লুক প্রসঙ্গে শাহরিয়ার সিজার বলেন, হয়তো লাউয়াছড়ায় ভাল্লুক স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। তবে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে তার পায়ের চিহ্ন দেখা যায়। তার মানে হচ্ছে লাউয়াছড়ায় তার আসা-যাওয়া রয়েছে। আমি দু’বার মাটিতে এবং গাছে ভাল্লুকের চিহ্ন দেখেছি।  
দাবি করা বন্য ছাগলের পায়ের ছাপ
বন্য ছাগল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্য ছাগল (Red Serow) দেখতে কিছুটা মায়া হরিণের (Barking Deer) মতো। তবে বেশ বড়। ওজন প্রায় দু’মণ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ফরেস্টে রয়েছে এ প্রাণীটি।  

প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক, লেখক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে লাউয়াছড়ায় ভাল্লুক এবং বন্য ছাগলের পায়ের ছাপের বিষয়ে তিনি বলেন, হতেও পারে। কারণ কালাছড়া বিটের পাশে এর আগেও একবার একটি ভাল্লুক মারা পড়েছিল। যেহেতু এখানে চা বাগান রয়েছে। চা বাগানের ভিতর দিয়ে অন্য এলাকা থেকেও এটি লাউয়াছড়ায় আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তবে পার্মানেন্টলি ভাল্লুক এখানে নেই। ভাল্লুক একটি বড় প্রাণী। পার্মানেন্টলি থাকলে আরও ফ্রিকুয়েন্টলি দেখা যেতো। ওরা সিজনালি লাউয়াছড়ায় আসে। চা বাগানের সঙ্গে লাউয়াছড়া কানেকশন রয়েছে যেহেতু, তাই ভাল্লুক বা বন্য ছাগলের আসাটাও বিচিত্র নয়।

তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভাল্লুকের পায়ের ছাপের বিষয়টি হলে হতেও পারে। কিন্তু লাউয়াছড়ায় বন্য ছাগলের উপস্থিতি আমরা এখনও পাইনি। আমরা এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।