ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিপন্নপ্রায় জলাভূমির ফল ‘ঢ্যাপ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
 বিপন্নপ্রায় জলাভূমির ফল ‘ঢ্যাপ’ বিপন্ন প্রজাতির শাপলা ফল ‘ঢ্যাপ’, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: শুভ্রমেঘ বিস্তৃত শরতের নীলাকাশে। মেঘগুলো ছোট-বড় টিলার মতো নিজেদের একেকটি ধাপে আলপনার মতো করে সাজিয়ে রেখেছে। নিচে প্রসারিত বাইক্কাবিলের পানিতে পড়েছে দুপুর-সূর্যের গাঢ় উত্তাপ।  

এক রুগ্ন নৌকোচালক জলজ-উদ্ভিদের ভেতরে দিয়ে এমনভাবে তার নৌকোটিকে নিয়ে প্রবেশ করাচ্ছিলেন যেন জলচর উদ্ভিদগুলো তাদের শারীরিক স্পর্শে আমাদের জানাচ্ছে জলাভূমি পরিদর্শনের ফুলেল আহ্বান। তাদের এ আহ্বানে হাস্যময় হয়ে প্রকৃতির দিকে চোখ মেলতেই দেখা গেলো, প্রকৃতির এ বিলটি অন্যরকম সাঝে সজ্জিত।

সাদা শাপলার মন ভোলানো হাসি দারুণভাবে বিমুগ্ধ করছিলো।
মাঝি হঠাৎ বলে উঠলেন, বাবু এই দেখেন ‘ভেট’! আমাদের একজন ‘ভেট’ কী বলে প্রশ্ন করতেই তিনি পুনরায় বললেন, ভেট মানে ‘শাপলার ফল’। ... এটি বাইক্কাবিল পরিভ্রমণের কয়েক বছর আগের ঘটনা।

শাপলা ফলটিকে ‘ঢ্যাপ’ বলা হয়। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় শাপলা ফলকে ‘ভেট’ বলে। শাপলা ফুলের ইংরেজি নাম Water lily। বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea nouchali। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটা তরকারি হিসেবে খেয়ে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, আমাশয়, বদহজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য ওষুধিগুণসম্পন্ন এ শাপলা ভেষজপ্রেমীরা বারবার খুঁজে ফেরেন। বিপন্ন প্রজাতির শাপলা ফল ‘ঢ্যাপ’, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনঅথচ কালের বিবর্তনে বাংলার অনেক ফুল-ফলের মতোই ‘শাপলা ফল’ বা ‌‘ঢ্যাপ’ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। দূষণময় জলাভূমিগুলো থেকে মুখ লুকিয়ে গভীর অভিমানে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে এরা!  

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল সাব-রেজিস্ট্রারি অফিসের প্রধান ফটকের সামনে দেখা গেলো এক বৃদ্ধ ‘শাপলা ফল’ বা ‘ঢ্যাপ’ বিক্রি করছেন। তিনি জানান, তার নাম বাসিত মিয়া; থাকেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নে। একহালি বা ৪টি ‘ঢ্যাপ’ এর দাম পাঁচ থেকে দশ টাকায় বিক্রি করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের জলাভূমিগুলো থেকে শাপলা ফুল আজ বিলুপ্তির পথে। শাপলা ফুল বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি ‘শাপলা ফল’ বা ‘ঢ্যাপ’ও প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যবাহী শাপলা, পানিফল, শালুক আর ঢ্যাপ আজ তেমন চোখে পড়ে না। শাপলা ফুল দেখতে যতটা সুন্দর এর ফল ততটা সুন্দর নয়। গোলাকৃতির। বিপন্ন প্রজাতির শাপলা ফল ‘ঢ্যাপ’, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন ফুলের বীজ দেখতে অনেকটা সরিষা বীজের মতো। ফলের খোসা ছাড়ালেই দেখা যায়ে এর ভেতর সাজানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অজস্র বীজ। ফলের ভেতর রয়েছে মণ্ডের মতো শাঁস। শাঁস সাদা রঙের আর বীজের রং বাদামি।

‘ঢ্যাপ’ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’ নামে পরিচিত। এই ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়। ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা ‘খই’ আর ‘নাড়ু’ অত্যন্ত সুস্বাদু।

বিলে, জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসই এ সুস্বাদু ‘ঢ্যাপ’ ফল বিলুপ্তির কারণ বলে জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।